শাবির শিক্ষক হয়েই থাকতে চাই : জাফর ইকবাল

শাবি প্রতিনিধি |

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাগত জীবনের দীর্ঘ ২৫ বছরের স্মৃতিচারণ করলেন দেশবরেণ্য লেখক ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অবসরে গিয়ে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান না করে শুধুমাত্র শাবির শিক্ষক হয়েই থাকতে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সময় একই মঞ্চে তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকও তার স্মৃতিচারণ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সাস্টে ২৫ বছর’ শীর্ষক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন ‘সাস্ট সায়েন্স এরেনা’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

একই মঞ্চে জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় কাটানো নিয়ে স্মৃতিচারণ করে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই সবুজ ক্যাম্পাসে। প্রতিটি পথচলায় আমি শিক্ষার্থীদের পাশে পেয়েছি। শাবিপ্রবিতে কাটানো ২৫ বছরের প্রতিটি মুহূর্ত আমি ভালোভাবে উপভোগ করেছি এবং এ ক্যাম্পাস থেকে একটা অপূর্ব স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবীর খুব কম সংখ্যক মানুষই এমন পাওয়াকে নিয়ে যেতে পারেন, যা দিয়ে বাকি জীবন অনায়াসে তার চলে যাবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই লেখার বিষয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা তো মুক্তিযুদ্ধ দেখনি। তোমাদের প্রজন্মের জানা উচিত— যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মানুষ কতটা কষ্ট করেছে। কীভাবে কঠিন মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করেছে। আমরা চাই, মুক্তিযুদ্ধে কী হয়েছে সবাই জানুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের অবস্থা কী ছিল তার অনেক স্মৃতি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাই, অসংখ্য স্বজন হারানোর বেদনা, দুঃখ, দুর্দশা, হাহাকার ইত্যাদি। তখন এমন কোনও পরিবার ছিল না যার কেউ না কেউ মারা যায়নি। আমরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, তাই এ স্মৃতিগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বিভিন্নভাবে বইয়ের লেখনির মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। বর্তমান প্রজন্ম ও পাঠক যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা যেন সঠিক তথ্য জানতে পারে, সে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কথা বলার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলেও জানান ড. জাফর ইকবাল।

একই মঞ্চে ড. জাফর ইকবালের পাশাপাশি শাবিতে আসা ও অতিবাহিত ২৫ বছরের নানা বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াছমিন হক ।

ড. ইয়াছমিন হক বলেন, ‘আমরা আমেরিকাতে ছিলাম। সেখান থেকে মিসেস ইকবাল নামে শাবিতে নিয়োগত্র পেয়েছিলাম। প্রথমে আমি এখানে আসতে চাইনি। জাফরের জন্য আমি এসেছিলামে এখানে। দাবি ছিল ইংরেজিতে লেকচার দেবো। কারণ, ভালো বাংলা জানতাম না। এখানে এসে পথচলায় অনেক কিছু শিখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্টের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। এর কারণে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ সবার কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। প্রাপ্তি অনেক।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নিয়মনীতি আছে, তাতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পাচ্ছে না, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে আরও বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাধীনতায় কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের প্রথম হলের নামকরণ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল রাখা হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। আশাকরি, একদিন ঠিকই এ নামে এ হলের নামকরণ করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইয়াছমিন হক।

স্মৃতিচারণ শেষে ছিল উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব। এসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।

এর আগে শিক্ষার্থীদের পক্ষে পিএমই বিভাগের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া বিনতে ফারুক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মিম, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মিতু নাহার ও সিইপি বিভাগের শিক্ষার্থী ত্রিদিপ সেন ক্যাম্পাসে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হকের সঙ্গে কাটানো সময় ও পদচারণা নিয়ে তাদের অনুভূতি তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। শিক্ষকতা পেশায় অসামান্য অবদান রেখে তারা দুজনই অল্প কিছু দিনের মধ্যে অবসরে যাচ্ছেন ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048480033874512