বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নকল মাস্ক সরবরাহের মামলায় গ্রেফতার ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাদিয়া ফারজানা বলেন, “তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করেছে অভিযোগ করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিএসএমএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
ওই মামলায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শারমিন জাহানকে। পরে রাতেই তাকে শাহবাগ থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, “শারমিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। মামলার নথিপত্র রাতেই তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
মামলার বিবরণে জানা যায়, শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এর বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০ জুন প্রথম দফায় ১৩০০, ২ জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১০০০ এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে।
কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়, “কোনো কোনো ফেইস মাস্কের বন্ধনী ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ এর সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারত।
“এ বিষয়ে ১৮ জুলাই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বিএসএমএমইউ। ২০ জুলাই লিখিত জবাবে শারমিন দুঃখপ্রকাশ করেন, যা আসামির দোষ স্বীকারের শামিল।”
বিষয়টি আমলে নিয়ে শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয় বলে ওসি আবুল হাসান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি।
এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানি খুলে তিনি ব্যবসা শুরু করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শারমিন জাহান শুক্রবার বলেছিলেন, “আমরা নকল মাস্ক সরবরাহ করিনি। এসব প্রোডাক্ট চীন থেকে ইম্পোর্টেড। এগুলোতো আমরা তৈরি করিনি। আমরা শুধু সাপ্লাই দিচ্ছি।
“প্রডাক্ট খারাপ হলে বিএসএমএমইউ প্রথমবারই আমাদের বলতে পারত। আমরা সেটা যাচাই করে দেখতে পারতাম।”