শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে

নূর মোহাম্মদ ও রুদ্র মিজান |

সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অনেকটা গোপনে চলছে এ কাজ। সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক পরিচয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

গত আগস্ট মাস থেকেই এই তৎপরতা শুরু হয়েছে। যদিও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য কোনো চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়নি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কমিশনের জানার প্রয়োজন নেই বলে নির্বাচন কমিশনের সচিব জানিয়েছেন। তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এটি নিয়মিত কাজের অংশ। তবে সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চলতি মাসেই তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

সূত্রমতে, ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ের কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে দাযিত্ব পালন করতে পারেন এ রকম কর্মকর্তা-শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দা ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। সুনামগঞ্জ জেলায় কর্মরত সরকারি একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত মাসে তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। অতীতে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি-না, এমনকি তাদের পরিবারের কোনো সদস্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কি-না, সেই দলের নাম, পদসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ সব তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে প্রশাসনের রদবদলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

অতীতেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদল হয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের নিজেদের ও পরিবারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিস্তারিত তথ্য এভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। বিশেষ করে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা এই কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। সূত্রমতে, ৪৯৫টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কার্যক্রম এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য, বিভিন্ন কার্যকলাপ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি পুলিশের কর্মকর্তারা। এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, শিক্ষকদের রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে কি-না এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তা ও শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগের মধ্যে আছে শিক্ষকরা। তারা বলছেন, আমার তথ্য বা রাজনৈতিক পরিচয় জানতে পারি। কিন্তু আমার পরিবারের মধ্যে কেউ রাজনীতি করে না কি, করলে কোন দল করে এসব তথ্য চাওয়া হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। এতে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মধ্যে।

প্রাথমিক শিক্ষকরা নিজেদের ফেসবুক ও শিক্ষকদের একাধিক গ্রুপের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জামালপুর সদরের মাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনি সম্প্রতি ফেসববুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের রাজনৈতিক পরিচয় চাওয়া হচ্ছে! সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক পরিচয় দেয়ার সুযোগ আছে কি? তার এ মন্তব্যটি প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে পরিচালিত একটি ফেসবুক গ্রুপ প্রাথমিক শিক্ষক কণ্ঠে পোস্ট করা হয়। সেখানে অনেক শিক্ষকরা এ ধরনের তথ্য নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষক কণ্ঠ ফেসবুক গ্রুপের একজন এডমিন বগুড়ার মারিয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক তারিকুল আলম বলেন, শুধু আমার নয়, এ স্কুলের সকল শিক্ষকদের তথ্য প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়েছে। কি ধরনের তথ্য নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার পরিবারের কতজন সদস্য, আমি রাজনীতি করি কী না, আমার পরিবারের কেউ রাজনীতি করে কি না, করলে কোন দলের ইত্যাদি। আমরা যেহেতু কোনো রাজনীতি করি না, তাই তথ্য দিতে কোন সমস্যা নাই। তবে আমার স্ত্রী একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। তার চৌদ্দগোষ্ঠীর তথ্য নেয়া হয়েছে।  

একাধিক শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব শিক্ষকদের ব্যাপার সন্দেহ হচ্ছে তাদের তথ্য বেশি নেয়া হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহের সময় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পারিবারিক তথ্য যেমন পিতা মাতা, ভাইবোন, চাচা, মামা, শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, স্বামী,  দেবর, ননদ ও ভাশুরের তথ্য। সবার তথ্য নেয়ায় শিক্ষকরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কারণ ইতিপূর্বে কারও তথ্য এভাবে নেয়া হয়নি। শিক্ষকরা বলেন, চাকরিতে প্রবেশের সময় পুলিশ  ভেরিফিকেশনে চাকরির প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো  ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ বা মামলা বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কি না তা দেখা হয়। কিন্তু এবার পারিবারিক তথ্য বিশেষ করে রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে তারা কিছুটা আতঙ্কে আছেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এএফএম মনজুর কাদের বলেন, শিক্ষকদের এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আমার জানা নেই। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্র হবে। তারমধ্যে বুথ হবে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৪০টি। প্রতি কেন্দ্র একজন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং দুইজন পোলিং অফিসার থাকবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে ৮ লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। এর একটা বড় অংশই হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক। শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এ ধরনের কোনো চিঠি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশকে দেইনি। শিক্ষকদের  ভেরিফিকেশনের বিষয়টি আমরা দেখবো তফসিল ঘোষণার পর। ভোটে সংযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা পরিচয়ের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের জানার দরকার নেই বলে জানান তিনি। 

 

 

সৌজন্যে: মানবজমিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058219432830811