শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওর আবেদনে জালিয়াতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অগ্রায়ন করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। যশোর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জানতেন স্কুলটিতে টাকার বিনিময়ে ব্যাকডেটে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। তবু তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদন অগ্রায়ন করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে।  ৯ মে রাত নয়টা পর্যন্ত ওই আবেদনগুলো জেলা শিক্ষা অফিসারের পর্যায়ে ছিলো। এমপিওভুক্তির আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সফটওয়ারেও এই জাল-জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে।  

জালিয়াতি ও ঘুষ লেনদেনের এই ঘটনা যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। জালিয়াতি করে নিয়োগ ও আবেদন প্রক্রিয়াকরণে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক। আর নিয়োগ বাণিজ্যের জন্য পদ খালি করতে ৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে আগেই। এর প্রতিকার চেয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বরখাস্তকৃত ৪ শিক্ষক-কর্মচারী। 

শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্কুলটির সভাপতি আকরাম বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমির উদ্দিন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান এসবই জানতেন।  

এ নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। কিন্তু গত বছরের জুন চারজন শিক্ষক ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।। 

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র দেখে দেখা যাবে ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জনের নিয়োগ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দেও  এই উপজেলা শিক্ষা অফিসারই যশোর সদরে কর্মরত ছিলেন। আমি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এমন কোন নিয়োগ হয়নি। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এসব নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি  বলেন, ব্যানবেইসের তথ্য যাচাই করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। অনেক সরকারি দপ্তরে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে দাখিল করা প্রতিষ্ঠান কাগজপত্র দেখলেও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু ধর্ম শিক্ষক, কম্পিউটার শিক্ষক, আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী পদের অনুমোদন না থাকলেও এসব পদে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি দেখলেই সব বোঝা যায়। আর নিয়োগ বাণিজ্য করতেই আমাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত চ্যালেঞ্জ করে আমরা রিট করেছি। আর আর এসব নিয়োগ-বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযোগে জানা যায়, বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে লাইলা পারভীন ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এবং সহিদুল ইসলাম সমাজবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক পদে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিদ্যালয়টি গত বছর এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত হয়। এরপর বিদ্যালয়ের সভাপতি আকরাম বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমির উদ্দিন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান যোগসাজস করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই শিক্ষকদের পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদেরকে এমপিওভুক্ত করার জন্য কাগজপত্রও দাখিল করেছেন। 

অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী বাংলার শিক্ষক লাইলা পারভীনকে সহকারী গ্রন্থগারিক পদে এবং সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক সহিদুল ইসলামকে সহকারী শিক্ষক শরিরচর্চা বিষয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে জমা দিয়েছে। লাইলা পারভীনের গ্রন্থগারিক ও সহিদুল ইসলামের শারীর চর্চা বিষয়ে কোন সনদপত্র নেই।

শিক্ষকরা  দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি আকরাম বিশ্বাস তার পুত্রবধুকে বিদ্যালয়ের কেরানি পদে নিয়োগ দিতে এসব জাল-জালিয়াতি করেছেন। আর বিদ্যালয়ের কেরানি নূর ইসলামকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সভাপতি আকরাম বিশ্বাস ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান চাচা-ভাইপো হওয়ার সুবাদে এসব অনিয়ম করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি একজন শিক্ষক। আমি নিয়োগ কমিটির কিছু না। কাউকে নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। নিয়োগ কমিটি ও ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দেয়।

এ বিষয়ে জানতে সভাপতি এম এম আকরাম বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তেমন কিছু হয়নি। এরপর ধন্যবাদ বলে ফোন কেটে দেন। 

অভিযোগের ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এই নিয়োগের সময় ছিলাম না। আমি জানতে পেরেছি এক মাদরাসার সুপার এর সাথে জড়িত। তাকে আমি সতর্ক করে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দিতে বলেছি। কাগজপত্র ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত সকলের এমপিও’র কাগজপত্র আমরা পাঠাতে পারবো না।

তবে, বাস্তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সবার কাগজই যাচাই-বাছাই ছাড়াই জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন। 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আবদুল খালেক বলেছেন, ‘একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখবো অভিযোগগুলো। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, জালিয়াতি করে কাউকে এমপিওভুক্ত হতে দেবো না। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058698654174805