কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাদরাসা শিক্ষক আজিজুর রহমানকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনার এক সপ্তাহ পর হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা নিয়েছে থানা। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বহুল আলোচিত মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন পিটুনিতে আহত শিক্ষক মাওলানা আজিজুর রহমান। এর আগে থানায় পিটিশন করেন আজিজুর রহমান। পিটিশন পেয়ে বৃহস্পতিবার সরেজমিন তদন্তে যান পুলিশ কর্মকর্তারা। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর পিটিশনটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে।
মামলাটি থানায় রেকর্ড করার পরই পুলিশের একাধিক টিম ওই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে। মামলার বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার থানার ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার।
শিক্ষককে পিটুনির পর সারাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ওই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারেছিন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন চেয়ারম্যানের শাস্তি দাবি করে বিবৃতি দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, পারিবারিক কলহের কারণে তার স্ত্রী আমেনা আক্তার গত ৯ এপ্রিল সকালে ওই শিক্ষকের (স্বামী) বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। পরে দুপুরের দিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আবদুল মতিন ওই শিক্ষককে বাড়ি থেকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। তিনি চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাওয়ার সময় তার মেয়ে দাখিল শ্রেণির ছাত্রী আরিফাতুন নুর এবং চাচাতো ভাই আবদুস ছামাদকে সাথে নিয়ে যান।
চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাওয়ার পর তার কোনো বক্তব্য না শুনেই চেয়ারম্যান লোহার রড দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যানের পায়ে ধরে ক্ষমা চান এবং পরে সেখানে উপস্থিত তার মেয়ে চিৎকার করেও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। এ সময় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামসহ অন্যান্য লোকজনও চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
পর দিন আহত ওই শিক্ষককে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরের দিকে আহত ওই শিক্ষক কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে চেয়ারম্যানের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযোগ গ্রহণ করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ।
এবিষয়ে মামলার বাদী আহত মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, আমার কোনো বক্তব্য না শুনেই চেয়ারম্যান আমার মেয়েসহ অন্যান্যদের সামনেই আমাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে পুরো শরীর রক্তাক্ত করেছেন। মামলা রেকর্ডে সহায়তার জন্য তিনি কুমিল্লার পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এবং থানার ওসি জহিরুল আনোয়ারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি অবিলম্বে ওই চেয়ারম্যানের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার জানান, আহত মাদরাসা শিক্ষক বাদী হয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে হাড় ভাঙ্গার জখমসহ হত্যার চেষ্টার সংশ্লিষ্ট ধারায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে।