শিক্ষক প্রশিক্ষণ: টেসলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষকদের উচ্চারণ প্রশিক্ষণের নামে টেসল নামক একটি কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ভুল উচ্চারণ, শিক্ষকদের কটূক্তি, এটুআইয়ের নাম ভাঙ্গানোসহ নানাবিধ প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টেসল নামক কোচিং সেন্টার দাবি করছে তাদের সাথে এটুআইয়ের চুক্তি হয়েছে এবং প্রতিটি ক্লাসের প্রতিজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঁচ হাজার টাকা করে প্রশিক্ষককে দেয়া হবে। তাছাড়া টেসল নামটিও চুরি করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজির একজন অধ্যাপক বলেছেন, টেসল কোচিং নামটি অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, টেসলের কথিত উচ্চারণ প্রশিক্ষক শিক্ষার্থী টানতে নানা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রশিক্ষক ইয়াছির বেসরকারি ইষ্টার্ণ ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করার পর ভাষা ইনিস্টিউট থেকে কোর্স করেছেন। তার নিজের উচ্চারণই শুদ্ধ নয় বলে তার শিক্ষকরা বলেছেন। আর এটুআই বলেছে তাদের সাথে কোনও চুক্তি হয়নি টেসলের। 

প্রশিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াছিরকে নিয়ে শিক্ষক সমাজে চলছে নানা বিতর্ক। তিনি আত্মপ্রচার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক দ্বারা প্রশিক্ষণ করানো ও শিক্ষকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার ফ্রি করার দবি জানান শিক্ষকরা। 

কয়েকজন জেলা অ্যাম্বাসেডর দৈনিক শিক্ষাকে জানান, তাদেরকে বলা হয়েছে করোনাকালে এটুআই শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রতি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জুম সফটওয়্যারের সাহায্যে অনলাইনে প্রথম ব্যাচ ২৯ মে থেকে শুরু হয়। প্রতিদিন ৫ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ করানো হয়। প্রথম সেশনে সারা দেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের পরেই বিভিন্ন শিক্ষকদের মাঝে জনৈক প্রশিক্ষক সম্পর্কে নানা প্রশ্নের উদ্ভব হয়। রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে অবস্থিত টেসল বাংলাদেশ নামের একটি ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াসির শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, "প্রথমে ভেবেছিলাম ইয়াসির সাহেব কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষক নতুবা সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষক। তার দাবি মতে, বাংলাদেশ পুলিশ ও আর্মিদেরও ট্রেইনার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। উনি আমাদের শেখানো শুরু করলেন আর মাঝেমধ্যে প্রযুক্তিতে দুর্বল শিক্ষকদের দু'চার কথা শুনিয়ে দিচ্ছিলেন। কোনো কোনো শিক্ষক না বুঝে মাইক্রোফোন অন রেখেছিলেন। এর জন্য তিনি বলে ফেললেন, "আপনাদের কি মাথায় কোনো সমস্যা আছে?" কথাটি আমাকে উদ্দেশ্য করে না বললেও, প্রতিটি কথাই আমার গায়ে এসে লাগলো। উনি উচ্চারণের যেসব পদ্ধতি শেখাচ্ছিলেন, সেসব উনার নিজের আবিষ্কৃত বলে চালিয়ে দিলেও, আমরা যারা ইংরেজি ভাষা নিয়ে লেখাপড়া করেছি, তারা ঠিকই ধরে ফেলেছিলাম। উনি মূলত ইংরেজি অ্যালফাবেট, ভাওয়েল ও কনসোনেন্ট এই তিনটি বিষয় নিয়ে লেকচার দিয়েছেন যেগুলো তিন ঘণ্টাতেই শেষ হতে পারতো। বাকি সময় তিনি উপস্থাপনা ও নিজের প্রচার করেছেন। দেশে এত নামকরা ইংরেজি ভাষার শিক্ষক থাকতে কোন স্বার্থে একজন কোচিং শিক্ষক দিয়ে কেন প্রশিক্ষণ করানো হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ইনস্টিটিউট আছে। সেখান থেকেও তো ট্রেইনার নিতে পারতেন। নায়েমে এক্সপার্ট ট্রেইনার আছেন। তাদেরকে দিয়েও তো ট্রেনিংটা করানো যেত" ।

প্রশিক্ষণের নাম: EXCLUSIVE TRAINING ON PRONUNCIATION & PRESENTATION SKILLS FOR ICT4E DISTRICT AMBASSADOR TEACHERS। 

এটুআইএর আরেকজন অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাকে জানান, "আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা প্রশিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াছিরকে এটুআই দেবেন। অর্থাৎ একজন অ্যাম্বাসেডরের প্রশিক্ষণের জন্য এটুআই পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, পাঁচ হাজার টাকার বিষয়ে এটুআই এর অ্যাম্বাসেডরদের মিটিং এ জানানো হয় ২৫ জুন রাতে। এখানেও অন্তত চারশো থেকে পাঁচশ শিক্ষক অংশগ্রহণ করবেন। সেই হিসেবে প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকা প্রশিক্ষক পাবেন। যার একটি টাকাও শিক্ষকরা পাবেন না। এত টাকা খরচ করছেন অথচ, শিক্ষার মানোন্নয়নের চিত্র বড়ই বিচিত্র!

শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের বিষয়ে গ্রামের শিক্ষকদের মতামতও ভিন্ন। তাদের কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ বেশি প্রয়োজন, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া দরকার। বিভাগীয় শহর অথবা রাজধানী এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মতামত শুনে গ্রামের  স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কাজেই যে কোনো ট্রেনিং শুরু করার আগে দয়া করে একবারে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত শিক্ষকদের একটা প্যানেল করে, তাদের মতামত গ্রহণ করুন। এই কাজটি অনলাইনেই সম্ভব”।

আরেকজন শিক্ষক বলেন, "শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন। অবশ্যই প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইন ট্রেনিং বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে এটুআই এর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু শিক্ষকদের কোন বিষয়ের ট্রেনিং দরকার, সেটা নিয়ে তারা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আমাদের অজানা। এই মুহূর্তে প্রথমত, শিক্ষকদের প্রয়োজন মোটিভেশনাল ট্রেনিং।

দ্বিতীয়ত, প্রয়োজন 'কীভাবে অনলাইনে মানসম্মত  ক্লাস নেয়া যায়' সে বিষয়ে ট্রেনিং। এই সমস্ত বিষয়গুলো তারা আমলে না নিয়ে, শুরু করলেন ইংরেজি উচ্চারণ ও উপস্থাপনা শেখানোর ট্রেনিং। যার প্রশিক্ষক নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে। এই ট্রেনিংয়ের ইমপ্লিমেন্ট কি এখন সম্ভব হবে? স্থান কাল পাত্র ভেদে আমাদের চিন্তা করা উচিত নয় কি? গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা কেমন, তা নতুন করে কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। ধীরগতির ইন্টারনেটে বারবার বাফারিং করা ভার্চুয়াল ট্রেনিংয়ে ইংরেজি উচ্চারণ মাত্রা কোন দিকে ছন্দিত হবে তা বলা মুশকিল। আর ইংরেজি ভাষা, উচ্চারণ ইত্যাদি ট্রেনিং দেয়ার জন্য ট্রেইনার কোচিং সেটারের শিক্ষক ছাড়া কি আর কেউ নেই"?

প্রশিক্ষক ইয়াছিরের মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! - dainik shiksha শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ - dainik shiksha ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062680244445801