শিক্ষক বদলি: মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গ্রামের শিক্ষকরা শহরে

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি |

বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের কোটা কেটে শহরের বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। এতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে এমন অভিযোগ এনে এক অভিভাবক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১৫২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমতলী পৌর শহরে ৯ টি বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৯শ ১০টি। বর্তমানে কর্মরত আছে ৭শ ৮৫ জন। ১শ ২৫ জন শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এদিকে, এ বছর জানুয়ারি মাসে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে শিক্ষক বদলি বাণিজ্য। মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকরা কোটা কর্তন করে আমতলী পৌর শহরের বিদ্যালয় বদলি হয়ে আসছেন। এতে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এমন করুণ দশার কথা জানিয়ে শিক্ষানুরাগী অভিভাবক মোঃ হাসান মৃধা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের আমতলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৩ টি। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন ২১ জন। আমতলী একে সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ রয়েছে ১৪ টি সেখানে শিক্ষক কর্তরত আছেন ১৮ জন। ছুরিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ রয়েছে ৬ টি কিন্তু শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন ৯ জন। গ্রামের বিদ্যালয়গুলো থেকে কোটা কর্তন করে শিক্ষকরা পৌর শহরের বিদ্যালয়ে কোটা সৃষ্টি করে বদলি হয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত শহরের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষক পদ কর্তন করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। 

কুকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫শ ৫০ জন। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক থাকার কথা ১৪ জন কিন্তু শিক্ষক আছেন মাত্র ৮ জন। গ্রামের অনেক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও ওই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২ জন। গ্রামের ৮০ ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংঙ্কট রয়েছে। 

এদিকে, ২০১৬  খ্রিষ্টাব্দে আমতলী পৌর শহরের বিদ্যালয়গুলোতে যোগদানকৃত শিক্ষকরা কোন বিধিতে বদলি হয়ে আমতলী পৌর শহরের বিদ্যালয়গুলোতে এসেছেন এমন কোনো তথ্য আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে নেই। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই তারা পৌর শহরের বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।

আমতলী পৌর শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা অভিভাবক মোঃ হাসান মৃধা বলেন, গ্রামের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সুবিধামত কোটা কর্তন করে পৌর শহরের বিদ্যালয়ে কোটা সৃষ্টি করে বদলি হয়ে এসেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামাঞ্চল ও পৌর শহরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সমন্বয়ের দাবি জানাই। 

আমতলী বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, অনেক শিক্ষক গ্রামের বিদ্যালয়ের কোটা কর্তন করে আমার বিদ্যালয়ে কোটা সৃষ্টি করে বদলি হয়ে এসেছেন। এখানে আমার কোনো দায় নেই। তিনি আরো বলেন, এগুলো করেছে উপজেলা শিক্ষা কমিটি।

আমতলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, এ অনিয়মগুলো একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক সমন্বয় করা হবে।

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষকরা পৌর শহরের বিদ্যালয়ে এসে জড়ো হয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী অনুপাতে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমন্বয় করা হবে। 
 
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028619766235352