শিক্ষক সংকটে এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি |

বানিয়াচংয়ের শতবর্ষী এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষকের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া। এক সময় যে বিদ্যালয়টি হবিগঞ্জ তথা সারা সিলেটের মধ্যে অভূতপূর্ব ফলাফলের জন্য বিখ্যাত ছিল, আজ সেই বিদ্যালয়টিই মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এর একমাত্র কারণ হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের অভাব। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৮৯৬ সালে বানিয়াচংয়ের সদরে ঐতিহাসিক সাগর দিঘির পশ্চিম পাড়ে লোকনাথ রমনবিহারী উচ্চ বিদ্যালয় (এল আর হাইস্কুল) স্থাপন করা হয়। ১৯৮৬ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়।

বিদ্যালয় সরকারিকরণের আগে অধিকাংশ শিক্ষক ছিলেন স্থানীয়। স্থানীয় সেইসব শিক্ষকরা অবসর নেয়ার পর থেকেই শিক্ষক সংকট দেখা দেয়।

সেটা এখন প্রকট আকার ধারণ করছে। ২৫ জন শিক্ষকের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন শিক্ষক। শূন্য রয়েছে অফিস সহকারী। এমএলএস ৬ জনের মধ্যে ১ জন। ইংরেজি শিক্ষক ৪ জনের মধ্যে ১ জন, গণিত ৩ জনের মধ্যে ১ জন, বাংলা ৪ জনের মধ্যে ১ জন, ধর্ম শিক্ষক ২ জনের মধ্যে ১ জন আছেন।

আর রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষা, ভূগোল, বাংলাদেশের বিশ্বপরিচয়, কম্পিউটারসহ চারু ও কারুকলার শিক্ষক পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে।

নেই নৈশপ্রহরীসহ মালি। শিক্ষক সংকটের কারণে লেখাপড়ার মান ক্রমশ অবনমিত হচ্ছে। এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এক সময় ছাত্ররা গর্ববোধ করতো। শিক্ষকের অভাবে সেই ঈর্ষণীয় ফলাফল আগের মতো আর নাই।

এখন লেখাপড়ার তীব্র প্রতিযোগিতার মাঠে এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি অনেক পিছিয়ে পড়েছে। চোখ জোড়ানো বিল্ডিং, বিশাল মাঠ, নেই সেই আগের ন্যায় ফলাফল। এ স্কুলের ছাত্র সংখ্যা হচ্ছে ৫৫০ জন।

এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এমএস কিবরিয়া, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান, সাবেক এমপি জনাব আলী, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ড. আবদুল কদ্দুস, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা নুরুল আমীন, সাবেক উপ-সচিব ড. শেখ ফজলে এলাহী, প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কর্নেল ডা. মোশাহিদ ঠাকুর, কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভাষক সুদ্বীপ শংকর ভট্টাচার্য-এর মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা।

তাছাড়া ওই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলাদেশ সচিবালয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুনামের সহিত চাকরি করছেন। এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম ইয়ার খান বলেন, প্রথমত সরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে ২০১২ সাল থেকে।

তারপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে ডিডি মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন। এরপর প্রায় একমাস যাবৎ কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে আমি মনে করি এমপি আলহাজ অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এ শতবর্ষ ঊর্ধ্ব ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট দূর করা যাবে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন জানান, সরকার যদি শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে চান তাহলে অবশ্য শূন্য পদগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সমস্যা হলো গ্রামে কোনো শিক্ষক আসতে চান না। আসলেও তারা লবিং করে চলে যান শহরের স্কুলগুলোতে।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান জানান, এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর শিক্ষক, কর্মচারীর সংকট দূরসহ সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026810169219971