রুটিনে ক্লাস। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও নেই শিক্ষক। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটটে (আরপিআই) ঘটে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রুটিনে ক্লাস থাকলেও নেই সেই বিভাগের শিক্ষক। তবে শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে ‘গেস্ট টিচার’ (অতিথি শিক্ষক) দিয়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন ইনস্টিটিউটটের শিক্ষকরা।
ইনস্টিটিউটটে সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৯ জন শিক্ষক পদের মধ্যে রয়েছে ৩৮ জন। শূন্যপদ ৩২টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স থেকে ই মেডিক্যাল পর্যন্ত ৮টি বিভাগের জন্য শিক্ষক মাত্র ৩৮ জন। ফলে অনেক বিষয়ে ক্লাস হয় না।
শিক্ষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, স্টেপের খণ্ডকালীন ও লোকাল খণ্ডকালীন শিক্ষকরা এসব বিষয়ের ক্লাসগুলো নিয়ে থাকে। এক কথায় ধার করা শিক্ষকেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটিতে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত কর্মচারীর অনুমোদিত পদ রয়েছে ১০২ টি। পদে কর্মরত রয়েছেন ৫৮ জন। এছাড়া শূন্য পদ রয়েছে ৪৪টি। প্রতিষ্ঠানটিতে অতিথি শিক্ষক রয়েছেন ৪৬ জন। অন্যদিকে স্টেপ খণ্ডকালীন (অতিথি শিক্ষক) শিক্ষক রয়েছে ২১জন। আর লোকাল খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ২৫ জন। এছাড়া ২৮ জন রয়েছে মাস্টার রোলের কর্মচারী। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ থাকলেও নেই উপাধ্যক্ষ। উপাধ্যক্ষ প্রায় এক বছর আগে বদলি হয়ে যান এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে। তখন থেকেই শূন্য রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ পদটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর একজন থাকলেও ইন্সট্রাক্টর দু’জনের মধ্যে রয়েছেন একজন। ওয়ার্কসপ সুপার একজন থাকলেও তিনজন জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের মধ্যে রয়েছেন একজন। মেকানিক্যাল বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর পদ থাকলেও কোনো শিক্ষক নেই। ইন্সট্রাক্টর পদে তিনজন থাকলেও ওয়ার্কসপ সুপার দুজনের মধ্যে একজন রয়েছে। চারজন জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের মধ্যে রয়েছে দু’জন।
সিভাল বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর একটি শিক্ষক পদ থাকলেও তাও শূন্য। আবার ইন্সট্রাক্টরের তিনজের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন চারজন (সংযুক্ত একজন)। ওয়ার্কসপ সুপার একজনের মধ্যে সেটিও শূন্য। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের তিনটির মধ্যে দু’জন নেই। ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর একজন। এছাড়া ইন্সট্রাক্টর তিনজনের মধ্যে রয়েছে একজন। ওয়ার্কসপ সুপার একজন শিক্ষকের পদ থাকলেও সেটিও ফাঁকা। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের তিনটির মধ্যে একটি শূন্য। কম্পিউটার বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর একজন রয়েছেন। ইন্সট্রাক্টর দুইজনের মধ্যে একজন কর্মরত। ওয়ার্কসপ সুপার নেই। তবে, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর একজন কর্মরত রয়েছেন।
পাওয়ার বিভাগে চিফ ইন্সট্রাক্টর একজন, ইন্সট্রাক্টর দুজনের মধ্যে একজন রয়েছে। ওয়ার্কসপ সুপার একজন ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর দু’জনের একজন নেই। মেকাট্রিনিক্স চিফ ইন্সট্রাক্টর, ইন্সট্রাক্টর ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মিলে ছয়টি পদের একটিতেও নেই কোনো শিক্ষক। তবে ওয়ার্কসপ সুপার পদ নেই এই বিভাগে।
ই-মেডিক্যাল বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর একজনই নেই। ইন্সট্রাক্টর দুইজন নেই। ওয়ার্কসপ সুপারের কোনো পদ নেই। তবে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর তিনজনই নেই। নক-টেক চিফ ইন্সট্রাক্টর একজন, ইন্সট্রাক্টর পাঁচ জনই রয়েছে। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পাঁচ জনই রয়েছে। এছাড়া ফি এডু ইন্সট্রাক্টর একজন কর্মরত রয়েছেন।
ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকের সংকট আছে। তবে ক্লাসগুলো মোটামোটি হয়। এই বিভাগের মোট শিক্ষক ৯ জন। তবে গ্রেস্ট শিক্ষক চার থেকে পাঁচ। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা অনেক অন্তরিক। তারা ক্লাসগুলো নেয়।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্থানীয়ভাবে কিছু শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে গেস্ট টিচারে (অতিথি শিক্ষক) চলানো হচ্ছে পাঠদান।