চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার আলোচিত কয়রাডাঙ্গা নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আবির হুসাইন হত্যার মূল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ ওরফে তামিম দারির অত্যাচারে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ফাঁসাতে আবিরকে গলাকেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছে ওই মাদ্রাসার ৫ ছাত্র। এরা হল- সদর উপজেলার হানুরবাড়াদি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে আনিসুজ্জামান, টেইপুরের আবদুল হাই কাতুর ছেলে ছালিমির হোসেন, আকুন্দবাড়িয়ার আবুল কালামের ছেলে আবু হানিফ রাতুল, মামুন হোসেনের ছেলে আবদুর নুর এবং বলদিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মুনায়েম হোসেন।
চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজেদুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে তারা। সোমবার বিকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের আদালতে হাজির করা হলে সন্ধ্যায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: মাদরাসাছাত্রকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা, শিক্ষক গ্রেফতার
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আনিসুজ্জামান জবানবন্দিতে জানায়, ‘তামিম হুজুর আমাদের ওপর খুব অত্যাচার করত। কারণে-অকারণে আমাদের বেত দিয়ে মারত, বিদ্যুৎ চলে গেলে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করাত। এরই একপর্যায়ে আমি (আনিস), ছালিমির ও রাতুল মিলে তামিম হুজুরকে হত্যার পরিকল্পনা করি। আবিরকে মারার আগে হুজুরকে মারার পরিকল্পনা ছিল। এরপর আমরা মাদ্রাসা থেকেই একটি ধারালো ছুরি ও একটি রড নিই।
সে মোতাবেক আমরা হুজুরকে মারার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করি, কিন্তু মারতে পারিনি। এরপর ঠিক করি, তামিম হুজুরকে যখন মারা গেল না, তখন হুজুর যাকে নিয়ে এসেছে, সেই আবিরকে মারব। আমরা ভেবেছিলাম, আবিরকে মারলে ওর বাবা-মা হুজুরকে সন্দেহ করবে এবং তামিম হুজুর ফেঁসে যাবে। ২১ জুলাই রাতে আমি ও মুনায়েম আবিরকে নিয়ে মাদ্রাসার পাশের বাগানে কাঁঠাল খেতে যাই। কিন্তু ভালো কাঁঠাল না পেয়ে ফিরে আসি। এ সময় আমি মুনায়েমকে বলি, তুই একটু দাঁড়া, আমি আবিরের সঙ্গে খারাপ কাজ করব। প্রথমে আবিরকে প্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়নি, পরে রাজি হলে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ জুলাই মাদ্রাসার খড়ির গাদায় একটি ধারালো ছুরি ও রড লুকিয়ে রাখি। ওই রাতে সবাই এশার নামাজে গেলে আমি আবিরকে বলি, চল কাঁঠাল খেতে যেতে হবে। আমার কথায় আবির রাজি হয়। তারপর ওকে নিয়ে আমি কাঁঠাল বাগানে যাই। ওখানে আগে থেকে আবদুর নুর, রাতুল ও ছালিমির অপেক্ষা করছিল। মুনায়েম লজিংয়ে খেতে চলে যায়। আবিরকে সঙ্গে করে আমবাগানে নিয়ে যাওয়ার সময় আবদুর নুর পেছন থেকে পালিয়ে যায়। আমবাগানে পৌঁছে আমি আবিরের গলা টিপে ধরে মাটিতে ফেলে দিই। ছালিমির ও রাতুল পা ধরে। তারপর আমি আমার ঘাড়ে থাকা তোয়ালে দিয়ে আবিরের গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে মেরে ফেলি।
তারপর লাশ টেনে আমরা বাগানের একপাশে নিয়ে যাই। ছালিমির আবিরের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এরপর তোয়ালে দিয়ে মাথাটা বেঁধে পাশের পুকুরের মধ্যে ফেলি। ওই পুকুরেই ফেলে দেয়া হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটিও। আর তোয়ালে আমার কাছে ছিল। তোয়ালেটা ছালিমিরের কাছে রেখে হাত-মুখ ধুয়ে আমি ছাত্রদের খেতে দিতে চলে যায়। মুনায়েম লজিংয়ে খেয়ে ফিরে এসে ছালিমিরের কাছ থেকে তোয়ালেটা নিয়ে মাদ্রাসার খড়ির গাদার নিচে লুকিয়ে রাখে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আবদুল খালেকের জানতে চাইলে তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার রাতে ওই ৫ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। তারা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে মাদ্রাসার ছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার কথা স্বীকার করে।