শিক্ষকতা ও মনুষ্যত্ব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন ছাত্রদের জ্ঞান, সততা, নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ, মূল্যবোধের দীক্ষা দিতে, শিক্ষার্থীর মানবতাবোধকে জাগ্রত করতে। একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানকে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের আগামী প্রজন্মকে সময়ের উপযোগী করে গড়ে তোলেন।

কিছুদিন আগে গ্রামের এক বড়োভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য টাকা জোগাড় করতে পারছিলেন না। জানতে পেরে কলেজের শিক্ষকদের কাছে যাই, সকলে মিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে যাবে, এই আশায়। কলেজের এক একটা ডিপার্টমেন্টে যেয়ে স্যারদের আমাদের উদ্দেশ্য বুঝানোর চেষ্টা করলাম। অনেকে হেসে উড়িয়ে দিলেন যেন আমরা পাগলামি করতে তাদের দ্বারস্থ হয়েছি। রোববার (১৪ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকার নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন শাহিন বিল্লাহ।

আমাদের কথা শুনে দ্রুত তারা কক্ষ ত্যাগ করতে লাগলেন। কোনো শিক্ষার্থীর সাহায্যে দেশের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা আবার ৫০/১০০ টাকা দিয়ে কোনোরকম দায়মুক্ত হলেন, যা ভিক্ষা ছাড়া কিছুই না। একজন অসহায় শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছে সাহায্য চায় তখন কীভাবে একজন শিক্ষক মুখ ফিরিয়ে নেয়? এমন অনেক শিক্ষক ছিলেন যারা মাসিক বেতনসহ ছাত্রদের পড়িয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেন কিন্তু, তাদের অনেকেই সহযোগিতা করা তো দূরের কথা, তাচ্ছিল্য করেন।

 

মনে মনে অনেক রাগ হয়েছিল, তারা কি চায় না গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাক ? যাদের কাছে টাকাই সব তারা কি করে বুঝবে দিনমজুর পিতার সন্তানের দুঃখ? পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে দেখেছি, চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী যে কি না শিক্ষার্থীদের খাতায় স্টাপল করে দেয় সেদিন কোনো কারণবশত স্টাপলারে কাজ করছিল না।

তাই এক শিক্ষক তার মায়ের বয়সি সেই কর্মচারীর উপর এমন আচরণ করল যা দেখে সকল শিক্ষার্থী আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। চতুর্থ শ্রেণির সেই কর্মচারী বিব্রত হয়ে চলে যায় ক্লাস থেকে। শিক্ষক, যিনি দেশের স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ থেকে লেখাপড়া শিখেছেন, তার থেকে এমন ব্যবহার সত্যি আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমার বন্ধু শিমুল লেখাপড়ায় অনেক ভালো।

কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না, তারপরও সে ভর্তি হলো বিজ্ঞান বিভাগে। কলেজের এক শিক্ষকের কাছে রসায়ন পড়তো। এক মাস পড়ে সে সামান্য কিছু টাকা কম দিয়েছিল, টাকা জোগাড় করতে না পারায় শিক্ষক বলেছিল, ‘পূর্ণ টাকা দিতে পারো না তো বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে কে বলেছে? পরের মাসে পূর্ণ টাকা দিতে পারলে পড়তে আসবা তা না হলে আসার দরকার নেই।’ শিমুল এতোটাই আঘাত পেয়েছিল যে, পরের দিন সে সেই বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগে চলে আসে।

ডাক্তার হবার যে স্বপ্ন সে লালন করেছিল নিমিষেই সেটা চুরমার হয়ে গেল! টাকা না থাকলে কি কেউ বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে পারবে না? শিমুলের স্বপ্ন ভাঙার জন্য দায় কার? তার দারিদ্র্যতার নাকি সেই শিক্ষকের? শুধু শিক্ষিত হলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হতে গেলে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। আমরা ভালো-খারাপ মিলে সমাজে বসবাস করি কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর দুঃখ-কষ্টে যে শিক্ষক পাশে থাকেন না, সেই শিক্ষক আর যাই হোক কখনো জাতি গঠনের কারিগর হতে পারেন না। সকল শিক্ষকই যে এ রকম আমি একথা বিশ্বাস করি না এবং কখনো করবোও না।

কেননা সব শিক্ষক এমন হলে পৃথিবী অচল হয়ে যেত। আমি বিশ্বাস করি অল্প কয়েক শিক্ষক ছাড়া সকল শিক্ষকই প্রকৃত মনুষ্যত্ব লালন করেন, ছাত্রছাত্রীসহ মানুষের বিপদে-আপদে তারাই সবার আগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই সকল শিক্ষকদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সকল শিক্ষকই মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে উঠুক এটাই আমাদের কামনা।

লেখক : শিক্ষার্থী, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028939247131348