শিক্ষকতার আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম, ভারতীয় নারী ঢাকায় গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নব্য জেএমবির নারী শাখাপ্রধান আসমানী খাতুন ওরফে আসমাকে গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয়। এরপরই পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের চিন্তায় ছিল, পরে জঙ্গিদের নারী শাখার হাল ধরবে কে? সেই জঙ্গিকে চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা তৎপরতাও জোরদার হয়। শেষ পর্যন্ত টানা পাঁচ মাসের তৎপরতায় নব্য জেএমবির নারী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত জঙ্গিকে জালে আটকানো গেলেও তার পরিচয় জেনে অবাক হন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারাও।

গত ১৬ জুলাই ঢাকার সদরঘাট থেকে আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুত তাসনিম নামের যে নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে ভারতীয় নাগরিক। শুধু তাই নয়, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানতে পেরেছে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলির সনাতন ধর্মাবলম্বী ২৫ বছর বয়সী প্রজ্ঞা দেবনাথই ধর্ম পাল্টে জঙ্গি হয়ে গেছে। নব্য জেএমবির আমির আসমানীর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়েছে ঝিমিয়ে পড়া নব্য জেএমবিকে সক্রিয় করতে! এরই মধ্যে বগুড়া থেকে নিজের নামে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করে নিয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদ আর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ভারতীয় এই নারী জঙ্গি।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রথম ভারতীয় নারী জঙ্গি বাংলাদেশে গ্রেফতার হলো, যে কি না ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গিবাদে নাম লিখিয়েছিল। এর আগে দেশে ধর্মান্তরিত একাধিক পুরুষ জঙ্গি ধরা পড়লেও প্রথম এই ধরনের কোনো বিদেশি নারী জঙ্গি ধরা পড়ল।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবির নারী শাখার আমির আসমানীকে গ্রেফতারের পর তারা তার সহযোগীদের খুঁজছিলেন। কারণ, এদের মধ্য থেকেই কেউ ফের নিষ্ফ্ক্রিয় সংগঠনটিকে সক্রিয় করার চেষ্টা করবে বলে তারা জানতেন। গ্রেফতার ভারতীয় জঙ্গি প্রজ্ঞা দেবনাথ ওরফে মোহনা এ দেশে মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে সেই কাজটিই করছিল। যদিও আসমানীকে গ্রেফতারের পর এখনও সংগঠনটির নারী শাখার কেউ আমির পদে আসেনি বলেই তারা মনে করছেন।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, মোহনা জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তা বিশ্নেষণ করে পরবর্তী কাজ চলছে। তা ছাড়া ভারতীয় এই জঙ্গির বিষয়ে দেশটির জঙ্গি দমন সংস্থার কর্মকর্তাদেরও অবহিত করা হয়েছে।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রজ্ঞা দেবনাথ ওরফে মোহনা জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দিতে বলেছে, সে সংগঠনের নির্দেশে বাংলাদেশে আসে। সংগঠনের নির্দেশেই ওমানপ্রবাসী আমির হোসেন সাদ্দাম নামের একজনকে ফোনে বিয়ে করে। পরিচয় লুকিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি নারী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত সে।

মোহনা জানিয়েছে, তার বাড়ি হুগলির পশ্চিম কেশবপুর গ্রামে। ২০০৯ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় সে মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নব্য জেএমবির নারী শাখার সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। বাংলাদেশের নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমানী খাতুনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। সেই সূত্রে ২০১৬ সালে ভারত থেকে নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশে যাতায়াত করত। সংগঠনের নির্দেশে গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বাস শুরু করে সে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সহকারী কমিশনার শেখ ইমরান হোসেন বলেন, এই প্রজ্ঞা দেবনাথ ওরফে মোহনা শিক্ষকতার আড়ালে বাংলাদেশে নাগরিক হওয়ার জন্য একটি ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে এবং সেটা ব্যবহার করে ভুয়া বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। সে অনলাইনে বিভিন্ন আইডি ব্যবহার করে সংগঠনের জন্য পুরুষ সদস্য নিয়োগ করা ও নারী সদস্যদের ধর্মীয় প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করত।

তিনি বলেন, নারী জঙ্গি মোহনা এরই মধ্যে অনেককে সংগঠনে নিয়োগ করেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি সে কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র পেল, সে বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029079914093018