শিক্ষকদের অনিয়ম রুখতে শিক্ষা বোর্ডের সতর্কতা

রাজশাহী প্রতিনিধি |

স্কুল কলেজে পাঠদানের সরকারি সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ স্কুল কলেজ দিনের প্রথম ভাগেই ছুটি হয়ে যায়। শিক্ষকদের অধিকাংশই হাজিরা দিয়ে নিজ নিজ কাজে চলে যান। কেউ প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছেন, কেউ ব্যবসা বাণিজ্যে মনোযোগী হচ্ছেন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জারি করেছেন এক বিশেষ সতর্কতা নোটিশ। 

এই নোটিশে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একশ্রেণীর শিক্ষকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ও নিয়ম মতো পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক অনীহা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। সরকারি বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধিবদ্ধ পাঠদানে ফাঁকিবাজি ও অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলেও উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসগুলোর মনিটরিং ও তত্ত্বাবধান নেই বলেও অভিভাবকরা অভিযোগে বলছেন। বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ বলছেন, নোটিশ জারির পর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকরা সময়ের আগে চলে গেলে এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়ে বিহিত করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোকবুল হোসেন নওগাঁ জেলার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান সেসব প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে দিনের প্রথম ভাগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ওই এলাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষকরা সরকারি বিধিবিধান লঙ্ঘন করে স্কুল-কলেজে হাজিরা দিয়েই চম্পট দেন। শিক্ষকরা স্কুল কলেজ ছাড়লে শিক্ষার্থীরাও চলে যায়। ফলে দুপুর ১২টার পর গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যায়। আবার কোথাও শিক্ষক স্কুলে হাজিরা দিয়েই কোচিং সেন্টারে বা প্রাইভেট পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানবিমুখ হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ রাজশাহী বিভাগের আওতাধীন দুই হাজার ৯৮৮টি স্কুল ও ৭৬০টি কলেজপ্রধানকে ৪ নভেম্বর জরুরি সতর্কতামূলক একটি চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠির অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশির ডিজি, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারসহ সব জেলা প্রশাসক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের দেয়া হয়েছে। চিঠিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্র্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই নিয়মের ব্যতিক্রম করে নির্ধারিত সময়ের আগে বন্ধ করা হলে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। বোর্ডের চিঠি পাওয়ার পর রাজশাহীর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনও তৎপর হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরা। নওগাঁর পোরশা উপজেলার কালাইবাড়ি গ্রামের অভিভাবক দুরুল হোদা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আশপাশের স্কুল কলেজের শিক্ষকরা দিনের এক দুই ঘণ্টা অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়েন। ফলে পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা এসব বিষয়ে উদাসীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম শিকেয় উঠেছে। এই সুযোগে শিক্ষকরা কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য জমিয়ে তুলেছেন।

অন্যদিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন আট জেলার জেলা প্রশাসকরা গত ৯ নভেম্বর জরুরি সভা করে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে ২০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রশাসনের কাছেও দিতে বলা হয়েছে। এই কার্যক্রম গত ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এতে ফাঁকিবাজ শিক্ষক বাধ্য হয়েই বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে থাকতে শুরু করেছেন বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর হাবিবুর রহমান জানান, সরকারি নিয়মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025620460510254