শিক্ষকদের ঘুষ দিয়ে বই পাঠ্য করাবেন না প্রকাশকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি এবং শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতিতে ঘুষ, উপহার-উপঢৌকন দেয়া বন্ধ করবেন প্রকাশকরা। এছাড়া নোট-গাইডসহ সহায়ক পাঠ্যবইয়ের দাম প্রায় ২০ শতাংশ কমছে। বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দাম কমানোর লক্ষ্যে মুনাফা এবং বিক্রেতাদের দেয়া কমিশনের হারও কমাবেন প্রকাশকরা। 

এ তথ্য নিশ্চিত করে বাপুস সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, ‘বইয়ের দাম কমানোর ব্যাপারে আমাদের ওপর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বুদ্ধিজীবীসহ সচেতন মহল থেকে বলা হচ্ছিল- শিক্ষার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। শিক্ষার ব্যয়ের অন্যতম খাত বই ক্রয়। তাই মুনাফা ও কমিশনের হার কমিয়ে আমরা বইয়ের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর ফলে আগে যে বই শিক্ষার্থী ৪০০ টাকায় পেত, এখন সেটি ৩২০ টাকায় পাবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অপরদিকে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় নোট-গাইডের উপযোগিতা কম। শিক্ষকরা দিনে দিনে এ ব্যবস্থায় প্রশিক্ষিত হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহায়ক বইয়ের উপযোগিতা আরও কমবে। এছাড়া সব শিক্ষক উপহার-উপঢৌকন নেন না। কিন্তু একটা অসৎ শ্রেণি তৈরি হচ্ছিল যারা অর্থের বিনিময়ে বই পাঠ্যভুক্ত করছিলেন। প্রকাশনা জগৎ উপহার না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ হবে। এর প্রাথমিক ইতিবাচক ফল পাবেন অভিভাবকরা। তাদের শিক্ষা ব্যয় কমবে। দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা ব্যবস্থাও লাভবান হবে। এটা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাপুস সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। এতে সমিতির সহসভাপতি কায়সার-ই আলম প্রধান, শ্যামল পাল, শরীফ উল আলম, মির্জা আলী আশরাফ কাসেম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় নির্ধারিত মূল্যে কমিশন ছাড়া বই বিক্রি, নকল বই রোধে সমিতির কার্যকর ভূমিকা পালনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলো সমিতি নীতিমালা আকারে প্রকাশ করবে।

সাধারণ সভায় দু’জন সহসভাপতি বলেন, স্কুলে যে উপহার-উপঢৌকন দেয়া হয় সেটা এক প্রকার ঘুষ। আমরা ঘুষ দিয়ে বই পাঠ্য করব না। তখন সমবেত বিক্রেতারা সমস্বরে বলেন, আপনারা (প্রকাশক) ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ অনৈতিকতা চর্চা বন্ধ হবে।

দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘শিক্ষিত জাতি গঠনে প্রকাশনা শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সেমিনারে অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, ভারতের পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় বক্তব্য দেন।

প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বইয়ের বিকাশ এবং এক্ষেত্রে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবরকম সহায়তা থাকবে। ত্রিদিব কুমার বলেন, বইয়ের ক্ষেত্রে যেকোনো বাধা দূর করতে দুই দেশের প্রকাশকদের আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

এতে মূল প্রবন্ধের ওপর প্রধান আলোচনাক ছিলেন পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান, লেখক ও শিশুসাহিত্যিক কামরুল হাসান শায়ক। এছাড়া মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, প্রকাশক ওসমান গণি, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ বক্তৃতা করেন। তারা বলেন, প্রকাশকরা বর্তমানে সহায়ক বই প্রকাশ করছে। ওই সব বইয়ে মুনাফা করেন বলেই প্রকাশকরা অলাভজনক সৃজনশীল বই প্রকাশ করছে। উভয় ধরনের বইয়ের কারবারে ২৬ হাজার লাইব্রেরিসহ লক্ষাধিক পরিবার জড়িত। তাই এক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে গোটা বইয়ের জগতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। গল্প-উপন্যাস-কবিতা বই মুদ্রণ পৃষ্ঠপোষকতা হারাবে। পাঠ্যবই মুদ্রণও বিঘ্নিত হবে।

নভেম্বরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা: আগামী নভেম্বরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করা হবে বলে অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এজন্য ইতোমধ্যে অর্থের সংস্থানও হয়েছে। প্রকাশকদের নিয়ে তারিখ ও ভেন্যু নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের প্রকাশনা ছড়িয়ে দিতে অন্য দেশের বইমেলায় প্রকাশকদের অংশ নিতে মন্ত্রণালয়ের দেয়া সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061740875244141