শিক্ষকদের নোট-গাইড নির্ভর পাঠদান দক্ষ ও উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি করুন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৭ ভাগ শিক্ষক নোট-গাইড দিয়ে পাঠদান করছেন। একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গত রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২২.৪ শতাংশ শিক্ষক প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যে সম্পৃক্ত।

৫৬ শতাংশেরও বেশি শিক্ষক নিজে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না। প্রতিবেদনে, শিক্ষকদের আর্থিক দুরবস্থার কথাও উঠে এসেছে। আর্থিক দুর্গতির কারণে অনেক শিক্ষক ব্যবসাসহ নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। বুধবার (১৬ অক্টোবর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নোট-গাইড আর প্রাইভেট কোচিংয়ের ফাঁদ থেকে দেশের শিক্ষব্যবস্থা বেরুতে পারছে না কিছুতেই। দেশের শিক্ষকদের বড় একটি অংশই যদি নোট-গাইড ব্যবহার করে তাহলে শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অঙ্ক, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাধারণ বিজ্ঞান, ইংলিশের মতো বিষয়ে নোট-গাইডের ব্যবহার হচ্ছে আরও বেশি হারে। এমনও অনেক শিক্ষক আছেন যারা নোট-গাইড ছাড়া বাংলাও পড়াতে পারেন না।

নোট-গাইড নির্ভরতা মানে হচ্ছে- লেখাপড়াকে মুখস্থ নির্ভর করে রাখা। মুখস্থনির্ভর বিদ্যাকে পেছনে ফেলে জ্ঞাননির্ভর বিদ্যার চর্চার জন্য নেয়া কোন পদক্ষেপই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে না। শিক্ষা খাতে পরিসংখ্যানগত উন্নতি যতটা হয়েছে, গুণগত উন্নতি ততটাই হয়নি।

শিক্ষা পদ্ধতির বড় একটি গলদ হচ্ছে যোগ্য, দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং আদর্শ শিক্ষকের অভাব। প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার স্তর পর্যন্ত এ সংকট দিন দিন প্রবল হচ্ছে। প্রথম কথা হচ্ছে, যোগ্য বা মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশাতে আসছে না। সিংহভাগ শিক্ষকই বাধ্য হয়ে এই পেশায় আসেন। ইচ্ছা হোক, আর অনিচ্ছায় হোক শিক্ষকতা পেশায় এসে যে নিজেদের যোগ্যতা-দক্ষতা বাড়াবেন সেই চেষ্টা থাকে না বেশিরভাগ শিক্ষকেরই।

অনেকেই কোনমতে শ্রেণীকক্ষে হাজির হন, তারপর প্রাইভেট-কোচিং বা অন্য কোন কাজে নেমে পড়েন। সরকার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণের মান নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজের উৎকর্ষ বাড়ানোর মতো মেধাই অনেক শিক্ষকের নেই। যারা নিজেদের উৎকর্ষ সাধন করতে পারেন না, তারা শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষ নিশ্চিত করবেন কীভাবে।

দেশে আদর্শ শিক্ষকের যে অভাব রয়েছে। শিক্ষাদানকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছেন এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। সেল্ফসেড আদর্শ শিক্ষক প্রশিক্ষণের অপেক্ষায় থাকেন না। আবার শিক্ষকতাকে যে কেউ আদর্শ হিসেবে গণ্য করবেন সেটাও আর্থসামাজিক কারণে সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদের যে বেতন-ভাতা দেয়া হয় তাতে শুধু তার পেটেই টান পড়ে না, সম্মানেও টান পড়ে।

শিক্ষকতা পেশাকে যতদিন পর্যন্ত আকর্ষণীয় করা না যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত শিক্ষা খাতের সমস্যা সংকট দূর হবে না। শিক্ষকদের সাধারণ বা বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের চেয়েও জরুরি হচ্ছে পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা দেয়া, সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। যে দেশে আমলাদেরকে শিক্ষকদের ওপরে মর্যাদা দেয়া হয় সেই দেশের তরুণ-তরুণীরা কেন শিক্ষক হতে চাইবে!

আমরা বলতে চাই, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় করতে হবে বেতন-ভাতা আর প্রশিক্ষণের পেছনে। শিক্ষার উন্নতি নিশ্চিত করা না গেলে ইট-কাঠের উন্নতি টেকসই হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের - dainik shiksha অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের - dainik shiksha হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা - dainik shiksha মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো - dainik shiksha ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003842830657959