শিক্ষকের অমানবিক আচরণের দুটি ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত হচ্ছে। পাকুন্দিয়ায় মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ মাহমুদের ছোড়া বেতের আঘাতে ইমরান (১১) নামের এক শিক্ষার্থীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ঝালকাঠিতে জোহরা মোস্তরি মেরী নামের এক মাদরাসা শিক্ষিকা বেত দিয়ে পিটিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর হাত ভেঙে দিয়েছে। দৈনিক সংবাদের এক নিবন্ধে এটা প্রকাশ হয়েছে।
নিবন্ধটিতে আরো বলা হয়েছে, শিক্ষকের হাতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকের কারণেই যদি শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। শিক্ষক যদি অমানবিক হয়ে ওঠেন, বেত্রাঘাত করেন বা সামান্য কারণে শাস্তি দেন তখন শিক্ষার্থীদের মনোবলের ক্ষতি হয়। আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে। শিক্ষার্থীর মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রশ্ন হচ্ছেÑ শিক্ষকতার দায়িত্ব নিয়ে যারা আসবেন তারা কেন এমন অমানবিক আচরণ করবেন? একজন শিক্ষার্থীকে কেন বেত্রাঘাত ভোগ করতে হবে? আমরা মনে করি, এ ধরনের নির্দয় শিক্ষকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ না করে বরং কসাইখানায় কাজ করা উচিত। এতে কসাইখানার শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল ২০১০ সালে। শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের অন্তরায় বলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কি সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে? এ ৯ বছরে বহু শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের মারধর করেছেন। কেউ কেউ এমন মারই মেরেছেন যে শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। মারের অপমান সহ্য করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়েছে। আবার শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এ জন্য কোন শিক্ষক শাস্তি পেয়েছেন এমনটা কখনও শোনা যায়নি। শাস্তি হিসেবে বড়জোর তাদের বরখাস্ত করা হয়। এর বাইরে আর কোন শাস্তির কথা জানা যায় না। প্রায়ই শিক্ষকের দেয়া শাস্তি ভোগ করে অনেক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর আসে। এর অর্থ, পরিপত্র সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব দেখার দায়িত্ব কার? তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করছে?
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষকই প্রশিক্ষণ না নিয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় এ সংকট আরও তীব্র। এখানে শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। শিশুর মানসিক গড়ন ও বিকাশ সম্পর্কে কোন ধারণা না নিয়েই অনেকে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে শিশুর মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হবে। কাজেই শ্রেণীকক্ষে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাকুন্দিয়া, ঝালকাঠিসহ দেশের অন্যান্য স্থানে যেসব শিক্ষক শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক ও অমানবিক আচরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল সেটি যেন সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয় সে ব্যাপারে নজর দেয়া জরুরি। শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।