শিক্ষা অফিসারকে জুতার মালা পরানোর অভিযোগে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার এক প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১৮ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত এক আদেশে কাউখালী উপজেলার ১ নং সয়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. উজ্জ্বল মিয়াকে সরকারি কর্মচারী শৃংখলা বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি মোতাবেক তাকে বরখাস্ত করা হয় ।
শিক্ষক মো. উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে আরও তিন জন শিক্ষক পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে একছড়া জুতার মালা নিয়ে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের গলায় জুতার মালা পরানোর চেষ্টা করেন এবং তাকে গালি দেন। তারা নিজেরাই আবার এ ঘটনা নিজেদের ক্যামেরাম্যান দিয়ে ছবি তুলিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সরবরাহ করেন।
বিভাগীয় তদন্তে ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে চার জন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই পৃথক পৃথক বিভাগীয় মামলা করা হয় এবং তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলার তদন্তে চার জন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেককেই চাকরি থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন তাদেরকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে উজ্জ্বল মিয়ার পক্ষ থেকে উক্ত নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করা হয়। আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি করে উজ্জ্বল মিয়াকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাকি তিন শিক্ষকের বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল খান চাকরির ৫৯ বছর পূর্তি হওয়ায় বেতন-ভাতা না পেয়েই অবসরে যান। অভিযুক্ত অন্য দু'জন হলেন, কেশরতা সুজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাদল হালদার ও মধ্য সোনাকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্যামল হালদার।
ভুক্তভোগী শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, ব্যক্তি জীবনে কোনো অসৎ কাজ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, এ কথা আমার কর্মক্ষেত্রে সবাই জানে। ওই সকল স্বার্থান্বেষী শিক্ষকরা আমার কাছ থেকে অবৈধ কোনো সুবিধা নিতে না পারায় যে অপকর্ম করেছে তার শাস্তি আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। বিলম্বে হলেও কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত সমাজের সকলের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি দ্রুত অন্য তিন অপকর্মকারীর অনুরুপ শাস্তি দাবি করছি । তা না হলে চাকরি শৃঙ্খলা বলতে কিছুই থাকবে না।