শিক্ষা কর্মকর্তার ‘সম্মানী বাণিজ্য’

বরিশাল প্রতিনিধি |

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল পরীক্ষায় ‘সম্মানী’ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে তিনি বরিশাল জেলার ৬৩ কেন্দ্র থেকে এবার সোয়া লাখ টাকার বেশী সম্মানী নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মানী নেয়ার কোন বিধান নেই বলে জানিয়েছেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: ইউনুস।

কেন্দ্রসচবিসহ পরীক্ষা নিতে যারা সরাসরি দায়িত্ব পালন করেন তাদের সম্মানী দেয়া হয়। আর এরআগে বরিশালের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিতে হয়নি। কিন্তু গত দুই বছর ধরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘সম্মানী’র নামে টাকা দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন শিক্ষকরা। তারা জানিয়েছেন, আগে এ ধরণের কোনো নিয়ম ছিলো না। কিন্তু বর্তমান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে তাকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার সময় সম্মানী দেয়া নিয়মে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষা অফিসে গিয়ে টাকা দিয়ে আসা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

২ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয় যা শেষ হয় ১৭ নভেম্বর। বরিশাল জেলা কেন্দ্র ছিলো ৬৩টি। এর মধ্যে স্কুল কেন্দ্র ৪৫টি এবং মাদরাসা কেন্দ্র ১৮টি।

বরিশাল নগরীর জগদীশ স্বারসত বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য জাকির হোসেন জানান, গত দুই বছর ধরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে সম্মানী দেয়া হচ্ছে। এর আগে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী বাবদ কোনো টাকা দিতে হয়নি। এ বছর আমরা তাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি।

মমতাজ মজিদুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, আমরা জেলা শিক্ষা অফিসারকে দুই হাজার টাকা সম্মানী দিয়েছি। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) তিন হাজার টাকা এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে তিন হাজার টাকা এবং ট্যাগ অফিসারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। পরীক্ষা কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ট্যাগ অফিসার হলেন সদস্য। তবে পরিপত্রে তাদের সম্মানী দিতে হবে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই। তারপরও পরোক্ষভাবে অনেক কিছু করতে হয়। আমার স্কুলে দুইদিন একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসছিলেন। তাকে সম্মানীর টাকা পাঠাতে একটু দেরী হওয়ায় তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে নালিশও করেছিলেন। 

বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুজ্জামান খান বলেন, আমরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে এ বছরই প্রথম দুই হাজার টাকা সম্মানী দিয়েছি। সব কেন্দ্র সচিবের সাথে আলোচনা করেই টাকার অংক নির্ধারণ করা হয়েছে। 

একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরীক্ষার সময় দাড়িয়ে আমরা তিন ঘন্টা দায়িত্ব পালন করি। এই জন্য আমাদের সর্বোচ্চ সম্মানী দেয়া হয় মাত্র ১২০ টাকা। আর জেলা শিক্ষা অফিসারসহ অনেক কর্মকর্তা যারা কোনো দায়িত্ব পালন করেন না তারা হাজার হাজার টাকা সম্মানী নেন। আগে কর্মকর্তাদের সম্মানী দিলেও ফিরিয়ে দিতেন কিন্তু গত দুই বছর অনেক কর্মকর্তা চেয়ে চেয়ে সম্মানী নেন।  

এ বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: ইউনুস জানান, এই ধরণের সম্মানী দেয়ার কোনো ফান্ড নেই। তারপরেও অনেক কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও এমনকি ডিসিদেরও নাকি সম¥ানী দেয়া হয় বলে শুনেছি। আবার অনেকে আছেন এই সম্মানী নেন না। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন এবং পরে কথা বলবেন বলে জানান। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056979656219482