শিক্ষা জাতীয়করণে কার বেশি লাভ?

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হলে কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন? কোন শ্রেণির মানুষের বেশি লাভ হবে? এর প্রত্যক্ষ উপকারভোগি কারা হবেন ? এ নিয়ে বিশদ ও বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ থেকে যায়। এক শ্রেণির মানুষের ধারণা, শিক্ষা জাতীয়করণে সব লাভ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের। দেশে বর্তমানে অর্ধ শতাধিক শিক্ষক সংগঠন যখন পৃথক পৃথক প্ল্যাটফর্ম থেকে জাতীয়করণের আন্দোলন করে, তখন সাধারণ মানুষের মনে করা খুবই স্বাভাবিক যে- জাতীয়করণ আন্দোলনটি নিছক শিক্ষকদের স্বার্থের একটি আন্দোলন। জাতীয়করণ ইস্যুতে সব শিক্ষক সংগঠন এক হয়ে আন্দোলন পরিচালনা করলে সাধারণ মানুষের মনে এরকম ধারণা জন্ম নিতো না।

শিক্ষক সমিতি ও সংগঠনগুলো জাতীয়করণের ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতি অপ্রতুল বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও বোনাসের বিষয়টি জোরেসোরে তুলে ধরে বলে সাধারণ মানুষ এটিকে কেবল শিক্ষক-কর্মচারীদের নিজেদের দাবি দাওয়া ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন মনে করে থাকেন। সব শিক্ষক-কর্মচারী ও সকল শিক্ষক সংগঠনের যেখানে একমাত্র দাবি 'জাতীয়করণ'- সেই এক দফা এক দাবিতে কেন তারা এক হতে পারেন না ? এই প্রশ্নটি কেবল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেনা, জাতীয়করণ আন্দোলনটি নিছক শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের স্বার্থের আন্দোলন বলে একটি অস্বচ্ছ ধারণার জন্ম দেয়।  তদুপরি, শিক্ষা জাতীয়করণ বিরোধী যে  শ্রেণিটি আছে তারাও জাতীয়করণে শুধু বেসরকারি শিক্ষক সমাজ উপকৃত হন বলে কৌশলে সরকারের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে এই কানমন্ত্রটি দিয়ে থাকেন। তা না হলে বর্তমান জন ও শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনক তনয়া শেখ হাসিনা শিক্ষা বিশেষত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের বিষয়ে এতো আন্তরিক হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধু সূচিত শিক্ষা জাতীয়করণের মহৎ কাজটি এক জায়গায় এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কেনো? জাতির জনক সপরিবারে নিহত হবার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসায় নতুন একটি আশার সঞ্চার হয়। সেই থেকে শিক্ষা জাতীয়করণ তথা মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর জাতীয়করণের বিষয়ে আর কারো মনে এতটুকু সন্দেহ অবশিষ্ট থাকেনি। 

শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলনটি বহু পুরনো একটি আন্দোলন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের জাতির জনকের একান্ত একটি স্বপ্ন ও অঙ্গিকার। প্রাথমিক শিক্ষাস্তর জাতীয়করণ করে বঙ্গবন্ধু পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ কার্যক্রমের শুভ সুচনাটি করেছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেই থেমে থাকেননি। মাধ্যমিক শিক্ষকদের মাসিক ৭৫ টাকা এবং কলেজ শিক্ষকদের ১০০ টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন দেবার আদেশ জারি করেন। তাঁর স্বপ্ন ও অঙ্গিকার ছিলো- প্রাথমিক শিক্ষাস্তর জাতীয়করণের দশ বছরের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং কুড়ি বছরের মধ্যে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করে ফেলা।

বৈষম্যহীন শিক্ষা চালু করে বিশ্বমানের দক্ষ মানব সম্পদ ও দেশপ্রেমিক সুনাগরিক তৈরি করার প্রত্যয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আরো কুড়িটি বছর বেঁচে থাকলে কুদরত-ই-খুদা কমিশনের আলোকে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই জাতীয়করণ হয়ে যেতো। এতোদিনে আমরা আজ শিক্ষার মানে ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর কাতারে পৌঁছে যেতাম। শিক্ষার মানের দিক থেকে এশিয়া মহাদেশে আমরাই সবার ওপরে থাকতাম। কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য, স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের পরবর্তি স্তর অর্থাৎ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি পর্যন্ত জাতীয়করণে কেউ হাত দেয়নি। অবশ্য '৭৫ পরবর্তি সময়ে জাতির জনকের তনয়া ও তাঁর আদর্শে গড়া দল আওয়ামীলীগ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার আগ পর্যন্ত অন্য কোনো সরকারের কাছে কেউ শিক্ষা জাতীয়করণের তেমন কোনো দাবি কিংবা  প্রত্যাশা করেনি। শেখ হাসিনা ও আওয়ামিলীগ সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রত্যাশা বেশি হবার কারণটি আমাদের অজানা নয়। দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ বরাবর বদ্ধপরিকর। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী উপমহাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনটি জাতির জনকের তনয়ার নেতৃত্বে আজ ক্ষমতার বলয়ে বলেই শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি ও প্রত্যাশা এখন দূর্বার হয়ে উঠেছে।

সঙ্গত কারণে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, যুদ্ধত্তোর দেশে বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে দেশ পূনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েই বঙ্গবন্ধু শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের মতো কঠিন কাজটি শুরু করেছিলেন কেনো? তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, দক্ষ মানব সম্পদ ও বিশ্বমানের নাগরিক তৈরির জন্য শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ ও অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষায় পুঁজি বিনিয়োগকে তিনি উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ মনে করতেন। শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছিলেন। শ্রেণি বিবর্জিত ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানের জন্য শিক্ষাকে সাধারণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। শিক্ষা ব্যয় হ্রাস করে তা সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। গ্রাম ও শহরের মধ্যে শিক্ষার বৈষম্য উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, কেউ যেনো শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে বাণিজ্য করতে না পারে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য একমুখি ও অভিন্ন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটি জীবন এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। একটি সুখি, সুন্দর,  দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা দরকার, তিনি তা-ই করতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিধ্বস্ত অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের মতো কঠিন কাজের শুভ সুচনা করেছিলেন। তাঁর স্বপ্নের সুখি ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা জাতীয়করণের অসমাপ্ত কাজটি দ্রুত সমাপ্ত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির প্রাক্ষালে অন্তত মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি জাতীয়করণ করা সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা জাতীয়করণ কেবল শিক্ষক সমাজ কিংবা কোনো শ্রেণি বিশেষের স্বার্থের জন্য নয়। এটি দেশ ও জাতির স্বার্থে অপরিহার্য একটি বিষয়।

শিক্ষক সমাজ দেশ ও জাতি গঠনের একমাত্র কারিগর শ্রেণি। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ বাহ্যত কিছুটা বাড়তি সুবিধা প্রাপ্য হন বটে। এটি অস্বীকার করিনা। কিন্তু, দেশ ও জাতি এর চেয়ে বেশি লাভবান হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে এর সত্যতা সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া তথা শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে উন্নত দেশগুলো এর সুফল দ্রুত ঘরে তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে। আর আমরা? স্বাধীনতার চার যুগ পেরিয়েও সে কাজটি করতে না পেরে কোনমতে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি।

শিক্ষক সমাজ জাতি গঠনের কারিগর বলে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণকে প্রধান হাতিয়ার বিবেচনায় এর জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে থাকেন। নিছক নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি কিংবা বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়। এই বিষয়টি দেশের সকল শ্রেণির নাগরিককে উপলব্ধি করতে হবে।  শিক্ষক সমাজকে সে কাজটিও করতে হবে। শিক্ষা জাতীয়করণের ফলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। মেধাবি প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে। শিক্ষা-বাণিজ্য বন্ধ হবে। নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্যের অবসান হবে। বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠলে বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি হবে। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও বিশ্বমানের সুনাগরিক তৈরি হবে। এসবের সুফল দেশের আপামর জনগণ অল্প সময়ে পেতে শুরু করবে। রেমিট্যান্স আজ  আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। অথচ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নয় বলে আমাদের জনশক্তি বিদেশে একেবারে সস্তায় বিক্রি হয়। শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে সাধারণ শিক্ষায় বিএ, এমএ পাস করেও অনেকে বিদেশে গিয়ে দারোয়ান, ড্রাইভার কিংবা মালির চাকরিও পায় না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দৈনিক ১৪ ঘন্টা পরিশ্রম করে বিদেশে তারা উপযুক্ত মজুরি পেলে আমাদের রেমিটেন্স আরো বেশি সমৃদ্ধ হতো।

একে তো বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বহু সংগঠন। তদুপরি তাদের মত ও পথের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কেউ শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ চান। কেউ চান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ। আরেক শ্রেণি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরি জাতীয়করণ চান। এক শ্রেণি শিক্ষক-কর্মচারী বদলি আগে চান। আরেক শ্রেণি আগে জাতীয়করণ। এক শ্রেণি করোনাকালেই শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ করে জাতীয়করণ আদায় করতে চান! আরেক শ্রেণি করোনাকাল চলে গেলে মহাসমাবেশ আয়োজন করার পক্ষে যুক্তি দেখান। সোস্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে পরস্পরের কাদা ছোঁড়াছুড়ি সাধারণ মানুষকে জাতীয়করণ বিষয়ে বেশি বিভ্রান্ত করে। শিক্ষক সমাজ এসব পরিহার করতে না পারলে শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন একদিন গুড়ে বালি-ই হবে।

দৈনিক শিক্ষার উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয়করণ আলোচনার শুরুতেই পত্রিকাটির প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষাসচিব মো, নজরুল ইসলাম খানের দেয়া পাঁচ পরামর্শের প্রধান পরামর্শ ছিলো “জাতীয়করণের দাবি আদায়ে সরকারের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা।” কিন্তু করোনাকালে ৫ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে সমাবেশ বা মহাসমাবেশ ঘোষণা করে তাওয়া গরম করে চার অক্টেবার বলা হবে ‘বিশেষ কারণে’ মহাসমাবেশ বাতিল! অতীতে অনেকবার এমনটা দেখেছি। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষককে ডেকে নিয়েও প্রেসক্লাবের সামনে সুযোগ পায়নি সমাবেশ করার। সেসব কষ্টকথা শিক্ষকরা এত সহজেই ভুলে যাবেন? 

করোনা মহামারি আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ না থাকায় করোনার মতো যে কোনো দীর্ঘস্থায়ী দূর্যোগ ও মহামারিতে শিক্ষা থমকে দাঁড়াতে বাধ্য। শিক্ষার ধ্বস টেকানো কঠিন। ঘরে থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই পথহারা পথিকের মতো হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া অন্য কিছু করার থাকে না।

শিক্ষার সব অসঙ্গতি দূর করতে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের কোনো বিকল্প পথ নেই। শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলনকে নিছক শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থের আন্দোলন মনে না করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এই আন্দোলনে শিক্ষক সমাজকে চালিকা শক্তির ভুমিকা পালন করতে হবে। একাধিক চালক বা ড্রাইভার যেমন একটি গাড়ি চালানোর জন্য প্রযোজ্য নয়, তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য এতো শিক্ষক সংগঠন কারোরই কাম্য নয়। বহু কিংবা একাধিক ড্রাইভার একত্রে একটি ড্রাইভিং সিটে বসে যার যার মতো করে চালিয়ে একটি গাড়ি নিয়ে যেমন গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না, তেমনি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বহু সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষা জাতীয়করণ আন্দোলনের সাফল্য আসতে পারে না। এরুপ গাড়ি মাঝপথেই দুর্ঘটনায় পতিত হবার আশংকা থেকে যায়। তেমনি যে কোনো আন্দোলন মকসুদে মঞ্জিলে পৌঁছার আগেই মাঠে মারা পড়ে। শিক্ষক সমিতিগুলোর নেতৃবৃন্দ যতো দ্রুত এই সত্যটি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন তত সহজেই সফলতার মুখ দেখতে পাবে। তা না হলে 'লংকা বহু দূর'- সিলেট অঞ্চলের এই গ্রামীণ প্রবাদটির উপহাস নিয়ে শিক্ষক সমাজ বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের আরো বহু বছর পথ চেয়ে বসে থাকতে হবে। ঐতিহাসিক মুজিববর্ষকে চিরদিনের মতো সমুজ্জল করে রাখতে এ বছরের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি জাতীয়করণ করা না হলে জাতির জনকের প্রতি যেমন আমাদের যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন হবে না, তেমনি একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সরকারের এসডিজি-ফোর বাস্তবায়ন ও উন্নত দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়া অসম্ভব কাজ। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর জাতীয়করণের উদ্যোগ নিতে সরকারকেই আগেভাগে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065310001373291