আজ ‘শিক্ষা দিবস’। শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শহীদ হন নবকুমার স্কুলের ছাত্র বাবুল, বাস কন্ডাক্টর গোলাম মোস্তফা ও গৃহকর্মী ওয়াজিউল্লা। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের পূর্ব অংশে শোষণ ও বৈষম্যমূলক নীতি অন্যান্য বিষয়ের মতো শিক্ষা ব্যবস্থায়ও দেখা দেয়।
১৯৪৭-৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ২৯,৬৩৩টি। ১৯৫৪-৫৫ সালে দেখা গেল, ওই সংখ্যা নেমে এসেছে ২৬,০০০-এ। কিন্তু তখন পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষার হার বাড়ছিল। তখন পশ্চিম পাকিস্তানে ড্রপ আউটের সংখ্যাও ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় অনেক কম।
পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ও ছিল অনেক বেশি। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর একটি খিচুড়ি ভাষা তৈরির ও বংলাভাষার ‘মুসলমানীকরণের’ অপচেষ্টা চলতে থাকে।
কবি নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘চল্ চল্ চল্’-এর ‘নব নবীনের গাহিয়া গান, সজীব করিব মহাশ্মশান’ চরণের সংশোধন করে, লেখা হয় ‘সজীব করিব গোরস্থান’। জনপ্রিয় ছড়া, ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।’
এটি পরিবর্তন করে করা হলো- ‘ফজরে উঠিয়া আমি দিলে দিলে বলি সারাদিন যেন আমি নেক হয়ে চলি।’ এ প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে শুরু হয় ১৯৫৯ সাল থেকে। অবশ্য ছাত্র বুদ্ধিজীবী মহল থেকে বিকৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়ে ওঠে তখনই।
১৯৫৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর একুশের সম্মিলিত অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সভাপতির ভাষণে এসব বিকৃতি এবং রোমান হরফ প্রবর্তনের প্রস্তাবসহ অন্যান্য তথাকথিত সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করেন যে, এসব তারা মেনে নেবেন না।
এদিকে বিশেষ করে এ সময়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থ-বৈষম্য এবং পশ্চিম কর্তৃক পূর্বকে শোষণের স্বরূপ বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা দুই অংশের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা ও তার গুরুত্বকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরনে।
এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন, রেহমান সোবহান প্রমুখ সর্বপ্রথম পাকিস্তানের অর্থনীতি বিশ্লেষণ করে পূর্ব পাকিস্তানের বেলার শুভঙ্করের ফাঁকিকে জনগণের কাছে তুলে ধরেন।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ দীর্ঘদিন পর আবার আলোড়িত হয়ে ওঠে। এর কারণও ছিল। সামরিক শাসনের পর থেকে প্রকাশ্য সাংগঠনিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যখন একেবারে নিষিদ্ধ তখন রাজনীতি আশ্রয় নিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে।
সামরিক সরকার এর সরাসরি বিরোধিতা করতে পারেনি বটে, কিন্তু একশ্রেণীর ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী সংগ্রহ করে অপপ্রচারে ইন্ধন যোগায়। ঢাকা জেলা কাউন্সিল হলে রবীন্দ্র বর্জনের আলোচনায় অংশ নেন আবদুল মান্নান তালিব, দেওয়ান আব্দুল হামিদ, মাওলানা মহিউদ্দিন, অধ্যাপক গোলাম আজম প্রমুখ।
সেখানে তাদের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের ইসলামভিত্তিক জাতীয়তা ও রাষ্ট্রকে খণ্ডিত করার উদ্দেশ্যে অখণ্ড ভারতীয় সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা রবীন্দ্রনাথকে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় কবি হিসাবে চালু করার জন্য একশ্রেণীর তথাকথিত সংস্কৃতিসেবী যে সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইতেছে, এই সভা তাহাদের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করিতেছে’।
এ পটভূমিতে পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতিসেবীরা ও অগ্রণী ছাত্রসমাজ যখন বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন, সামরিক শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সে সময় ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর তা কার্যকর হওয়া শুরু হয়।
উল্লেখ্য আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট হয়েই শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৮ পাকিস্তান শিক্ষা বিভাগের সচিব ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সাবেক শিক্ষক এসএম শরীফকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন।
শিক্ষা আন্দোলনের কারণ : শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শরীফ কমিশন অর্থ সংস্থান সম্পর্কিত প্রস্তাব ও মন্তব্য ছিল - ‘শিক্ষা সস্তায় পাওয়া সম্ভব নয়’। ২. অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল ও নামমাত্র বেতনের মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করাই জনসাধারণের রীতি।
তাদের উপলব্ধি করতে হবে, অবৈতনিক শিক্ষার ধারণা বস্তুত অবাস্তব কল্পনা মাত্র। ৩. শরীফ কমিশনের যে সুপারিশ বাষট্টির ছাত্র আন্দোলনকে তীব্রতর করে ও আশু কারণ হিসেবে দেখা দেয় তা হল- দুই বছরমেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি কোর্সকে তিন বছরমেয়াদি করার সুপারিশ। ৪. আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতার।
ছাত্রসমাজ শরীফ কমিশন প্রতিবেদনকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতি হিসেবে চিহ্নিত ও মূল্যায়ন করেন, শিক্ষা সংকোচনমূলক গণবিরোধী এ প্রতিবেদন তারা প্রত্যাখ্যান করেন। ছাত্ররা আগে থেকেই আইয়ুব তথা সামরিক আইনবিরোধী আন্দোলনে ছিল। এমন একটা অবস্থায় শরীফ কমিশনের গণবিরোধী সুপারিশ ছিল ভিমরুলের চাকে ঢিল দেয়ার মতো।
তারা অত্যন্ত সংগঠিতভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হন। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরের ছাত্ররা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা কলেজ থেকে। তিন বছরমেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্সের বিপক্ষে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সর্বপ্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ডিগ্রি ছাত্র প্রতিবন্ধী এম আই চৌধুরী এই আন্দোলনের সূচনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ইংরেজিকে অতিরিক্ত বোঝা মনে করে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর পরীক্ষার্থীরাও আন্দোলন শুরু করেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কলেজে এ আন্দোলন চলছিল।
স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রদের লাগাতার ধর্মঘট এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্রদের ইংরেজি ক্লাস বর্জনের মধ্যে এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল। জুলাই ধরে এভাবেই আন্দোলন চলে। ‘ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম’ নামে সংগঠন পরে ‘ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফোরাম’ নামে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন চালাতে থাকে।
‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ গ্রন্থের রচিয়তা ড. মোহাম্মদ হাননান লিখেছেন : ‘তবে আন্দোলনের গুণগত পরিবর্তন ঘটে ১০ আগস্ট (১৯৬২)। এদিন বিকালে ঢাকা কলেজ ক্যান্টিনে স্নাতক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় শ্রেণীর ছাত্ররা এক সমাবেশে মিলিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কাজী ফারুক আহমেদ। সে তার বক্তৃতায় উপস্থিত ছাত্রদের এ কথা বুঝাতে সক্ষম হয় যে শিক্ষার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা।
এই সভার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কমিশনবিরোধী আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করতেন, শুধুমাত্র শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা অসম্ভব।
১০ আগস্টের এই সভায় ১৫ আগস্ট সারা দেশে ছাত্রদের সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশব্যাপী ছাত্র সামাজের কাছে তা ব্যাপক সাড়া জাগায়। এরপর আন্দোলনের পববর্তী কর্মসূচি হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের সামনে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১৫ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় বেশ কয়েকটি ছাত্রসভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল-কলেজের ব্যাপক ছাত্রছাত্রী এতে প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ করে। ১০ সেপ্টেম্বরের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এক সভায় মিলিত হন।
এতে যোগদান করে ডাকসুর পক্ষে এনায়েতুর রহমান, জামাল আনোয়ার বসু, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফারুক, জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ ওয়ারেস ইমাম, ইডেন কলেজ সংসদের সহ-সভানেত্রী মতিয়া চৌধুরী, নাজমা বেগম, কায়দে আযম কলেজ সংসদের সহ-সভাপতি নূরুল আরেফীন খান, তোলারাম কলেজ (নারায়ণগজ্ঞ) সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বাগমার প্রমুখ।
কাজী ফারুক (ছাত্র ইউনিয়ন), আব্দুল্লাহ ওয়ারেস ইমাম (ছাত্র লীগ) যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন ইস্ট পাকিস্তানের স্টুডেন্টস ফোরামের। ... আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু এতদিন ছিল স্কুল-কলেজগুলো। এখন তা চলে এলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায়।
পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে এক প্রেসনোটে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘট থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। অন্যথায় পরিস্থিতি মারাত্মক হবে বলে হুমকি প্রদান করে। এমতাবস্থায় ১০ সেপ্টেম্বর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলেও ছাত্ররা ১৭ সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দেয়। করা হয় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা। চলতে থাকে পথসভা, খণ্ডমিছিল। ব্যবসায়ী সমিতি, কর্মচারী সমিতি, রিকশা ইউনিয়ন, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর খুব ভোর থেকেই ছাত্ররা পিকেটিং শুরু করে। পিকেটিংয়ের আওতায় পড়ে মোনায়েম মন্ত্রিসভার সদস্য হাসান আসকারির মার্সিডিজ গাড়ি ভস্মীভূত হয়। একই সঙ্গে জ্বলতে থাকে দু’তিনটি জিপও। সার্জেন্ট হাফিজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নবাবপুর রেলক্রসিং থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতাকে ধাওয়া ও গ্রেফতার করে চলছিল।
সকাল ৯টা না বাজতেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। এমন সময় খবর আসে নবাবপুরে গুলি হয়েছে এবং কয়েকজন শহীদ হয়েছেন। তৎক্ষণাৎ সব জমায়েতে অগ্নিশিখার ঢেউ বয়ে যায়। এর পর বের হয় জঙ্গি মিছিল।
এতে নেতৃত্ব দেন সিরাজুল আলম খান, মহিউদ্দীন আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রণো, রেজা আলী প্রমুখ। মিছিল যখন হাইকোর্ট পার হয়ে আবদুল গণি রোডে প্রবেশ করছিল তখন মিছিলের পেছনে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। এতে নিহত হয় বাবুল এবং গোলাম মোস্তফা (ই,পি,আর,টি,সি সরকারি বাসের কন্ডাক্টর) একই সঙ্গে আহত হয় ওয়াজিউল্লাহ (গৃহকর্মী)। সে হাসপাতালে পরদিন মারা যায়।
ওইদিন আহত হন অনেকে। ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান অন্য ছাত্রকর্মীদের নিয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অন্যদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী অবদুল হালিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র আবদুল হামিদকে। ওই দিনের বিক্ষোভ মিছিলে মেহনতি মানুষের অংশগ্রহণ ছিল ৯৫%। দেখা গেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বুড়িগঙ্গার ওপার থেকে পর্যন্ত নৌকার মাঝিরা বৈঠা হাতে মিছিল নিয়ে চলে এসেছে।’
ওই ঘটনার পর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ৪টি মোটা দাগের ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে তা হল- ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর আন্দোলন ও ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন।
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার কারণে এ দিনটি আমাকে ৫৬ বছর আগের ঘটনাবহুল দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় যখন আমরা একটি গণমুখী শিক্ষানীতির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। দুঃখ হয় দিনটি এখন পর্যন্ত জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি পায়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পরিবর্তন আসেনি।
এমডিজি’র পর এসডিজি এসেছে। দুটোরই প্রধান ভিত্তি শিক্ষা। এবারের শিক্ষা দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন, বৈষম্য-বঞ্চনার অবসান। মানব সম্পদ উন্নয়নের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যে কয় ধাপ অগ্রসর হয়েছে তা উত্তরোত্তর অব্যাহত থাকুক। আমি নিশ্চিত, শিক্ষাকে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে রাখতে পারলে, যথাযথ প্রণোদনা দেয়া হলে, যথাসময়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।
লেখক : বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য
সৌজন্যে: যুগান্তর