শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি কত দূর!

শাহিনুল আশিক |

মুঠোফোনে রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনের কাছে প্রশ্ন ছিলো, রাজশাহী জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কি যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি আছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আছে’। আমি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর উপজেলার চাঁদলাই পরগনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে এসেছি।’ তখন ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এই স্কুলটির যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা ও আলোচনা করে কি না? এসময় ওই শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাদের স্কুলে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি আছে? এমন কথার উত্তরে ওই স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, না স্যার। কমিটি নেই। এসময় শিক্ষা কর্মকর্তা অবাক হয়ে শিক্ষকদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে নিরুত্তর ছিলেন শিক্ষক।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন কমিটি গঠনের কথা জানানো হয় মন্ত্রাণালয় থেকে। সেই লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠিও দেয়া হয়। কিন্তু চিঠি মোতাবেক গঠন করা হয়নি কমিটি। তবে এই কমিটি গঠন নিয়ে অনেকটাই উদাসীন শিক্ষকরা

জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ৫৩৯টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছিল কমিটি গঠনের লক্ষ্যে।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে কমিটি নেই। আগামি উপজেলা সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনগুলোর প্রধানদের কমিটি করার বিষয়ে বলা হবে।

অন্যদিকে, যৌন নির্যাতন কমিটির বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাই জানেন না। এ নিয়ে স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এনিয়ে ক্লাসে আলোচনা করে না। এই জায়গায় অনেকটাই ঘাটতি রয়েছে। তবে রাজশাহীর দুটি কলেজ, একটি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানেন না যৌন নির্যাতনের কমিটির বিষয়। তাদের দাবি ক্লাসে এসব বিষয়ে কিছুই বলেন না শিক্ষকরা।

এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সেতু বলেন, এমন কমিটি আছে কিনা তিনি এ বিষয়ে জানেন না। বরেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী কাউসার বলেন, কখনো ক্লাসে এনিয়ে আলোচনাও করেননি শিক্ষকরা।’

কলেজের অধ্যক্ষ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আলমগীর মালেক বলেন, একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন তারা জানে না। এছাড়া দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এধরনের সভাগুলো করে থাকে। প্রায় দুমাস পর পর এধরনের সভা হয়। এসময় মাদক, দুর্নীতি, বাল্য বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করা হয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে।

এছাড়া নজমুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মীম বলেন, শিক্ষকরা তোদের কিছু বলে না। মীমের মা ফারহানা বলেন, কখনো স্কুল থেকে ডাকা হয়নি এই সমস্ত কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে। এছাড়া একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সারা ও তানিয়া একই কথা বলে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল কালাম আজাদ বলেন, কমিটি আছে। তবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা করা হয় না। প্রতিমাসে এনিয়ে সভাও করা সম্ভব হয় না।

মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি কল্পনা রায় বলেন, উত্ত্যক্তের ঘটনা অনেক বেড়েছে। সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে। এ সমস্যাগুলো প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা জরুরি। মূল সমস্যা এই ধরনের অপরাধের বিচার দ্রুত কার্যকর হয় না। এ লক্ষ্যে প্রশাসনের ভূমিকা জরুরি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটিগুলো সচল হলে এবিষয়গুলো আলোচনায় থাকে। ফলে অনেকটাই কমবে এ ধরনের ঘটনা।
স্বেচ্ছাসেবী বহুমুখি সমাজ কল্যাণ সমিতির (এসবিএমএসএস) নির্বাহী কমিটি নূর-এ-জান্নাত বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নির্যাতন কমিটি গঠন অনেক জরুরি। এই কমিটির সভা থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সচেতনার বিষয়গুলোর মধ্যে বাল্য বিয়ে, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কমিটি করেনি তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ করা দরকার। এলক্ষ্যে স্কুলগুলো পরিদর্শনে উন্নয়নকর্মীদের কাজে লাগানো যেতে পরে।

প্রসঙ্গত, কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গণে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিক-নির্দেশনা চেয়ে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।

ওই রিট নিষ্পত্তি করে ২০০৯ সালের ১৫ মে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞাসহ যৌন হয়রানি রোধে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়ে মামলাটির রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! - dainik shiksha শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ - dainik shiksha ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051088333129883