বদলি বাণিজ্যে লিপ্ত কয়েকজন অতিরিক্ত ও যুগ্মসচিবশিক্ষা প্রশাসনে বড় পরিবর্তন আসছে

রাকিব উদ্দিন |

শিক্ষা প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল আসছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ‘লোভনীয়’ পদে ৮/১০ বছর ধরে ঘুরেফিরে চাকরি করা শিক্ষকদের এবার বদলি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারি হাইস্কুল, কলেজ, অধিদপ্তর, ডিআইএ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এরপরই বদলি ও শাস্তিমূলক পদায়ন শুরু হবে। শুরুতেই বদলি হতে পারেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থি এমন কর্মকর্তারা নিজেদের ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’ দাবি করে বদলি ঠেকাতে সরকারের নানা মহলে ধর্ণা দিচ্ছেন।

নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নানা মাধ্যমে শিক্ষা প্রশাসনের বিতর্কিত ও বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তারা গত সোমবার নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তরসহ ও বিভিন্ন উইং প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরে ৮/১০ জন অতিরিক্ত ও যুগ্মসচিব ৭/৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অথচ সরকারি চাকরিতে একজন কর্মকর্তাকে একই স্টেশনে তিন বছরের বেশি রাখার নিয়ম নেই। এছাড়াও মাউশি’র শীর্ষস্থানীয় পদে একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদায়ন করায় পুরো শিক্ষা ক্যাডারেই অসন্তোষ বিরাজ করছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে গত বছর শিক্ষার মানোন্নয়নের একটি বড় প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) করা হয়। অপর একটি প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি বজলুল হুদার এক আত্মীয়কে। এ নিয়োগ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন অসন্তোষ বিরাজ করে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) কর্মরত থাকা অবস্থায় সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক অভিহিত করে একটি গবেষণাপত্র লিখে ব্যাপক আলোচনায় আসা এক কর্মকর্তাকে গত বছর মাউশি’র গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকের পদে বসানো হয়।

এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে তদবির করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক বিশিষ্ট নাগরিকরা। এসব নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাউশি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল লেগেই আছে। সংস্থার দাফতরিক কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পরছে।

এছাড়াও মাউশি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিতর্কিত ৩০/৪০ জন কর্মকর্তা বহাল রয়েছেন। তারা ঘুরেফিরে ৮/১০ বছর ধরে শিক্ষা ভবনে চাকরি করছেন। অথচ শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন-এমন কর্মকর্তারা শিক্ষা ভবনে অনেকটাই কোনঠাসা। ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তারা।

একই অবস্থা বিরাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), নায়েম ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে। রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেও বহাল আছেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা।

শিক্ষকদের দীর্ঘদিন একই পদ ও রাজধানীতে চাকরি করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার সংবাদকে বলেন, ‘সুশাসনের জন্য সরকার যা যা পদক্ষেপ নেবে আমরা এর সঙ্গে থাকব। কারণ সব স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা সরকারের একটি কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার)। এটি বাস্তবায়নে পদায়নের ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতাÑ একটি ক্রাইটেরিয়া হওয়া উচিৎ। আর যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।’

সূত্র: দৈনিক সংবাদ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055720806121826