শিক্ষাজীবন রক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন রাজধানীর খিলক্ষেতের রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী। অনেক শিক্ষার্থী কলেজটিতে ভর্তি হয়ে বিপাকে পড়েছেন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে চাইলেও এর জন্য কলেজ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। তাই প্রতিকার পেতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ধরনা দিচ্ছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা কলেজটি থেকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে চাইলেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে শিক্ষা বোর্ডে ধরনা দিচ্ছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, নানান অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেতের রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজের অনুমোদন প্রায় সাত বছর আগেই বাতিল করা হয়। কিন্তু এখনও বহাল তবিয়তেই চলছে এর কার্যক্রম। বর্তমানে শিক্ষার্থীও ভর্তি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের আবেদন ও অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ড. হারুন-অর রশীদ বলেন, নানা অভিযোগ ও অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বোর্ড থেকে রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজকে শোকজসহ বার বার সতর্ক করা হয়। তারপর ওই বছরই কলেজটির পাঠদান অনুমোদন বাতিল করা হয়।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দেই কলেজটির পাঠদান অনুমোদন বাতিল করা হয়। ক্লাস বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কলেজের গেটে তালা ঝুলে ছিল। এছাড়া গত পাঁচ বছর ধরে কলেজটিতে নেই কোনো কমিটি।
আরও পড়ুন: রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ কর্তৃপক্ষ লাপাত্তা
একাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে টিসির (ছাড়পত্র) জন্য কলেজ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে। অনেকের টিসি আবার টাকার জন্য আটকে রাখা হয়েছে। নিরূপায় হয়ে শিক্ষাজীবন রক্ষায় শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন দ্বিতীয় বর্ষের ২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ভর্তি ফি নিয়ে গত বছর একাদশ শ্রেণিতে শতাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। রাজধানীর বাইরের শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে থাকা নিয়ে বিড়ম্বনা, অনিয়ম, ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণেরও অভিযোগ তোলা হয়। ভয়ে-শঙ্কায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আগেই অন্যত্র চলে যান বলে জানা যায়।
শিক্ষার্থীদের আবেদন ও অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ড. হারুন-অর রশীদ বলেন, নানা অভিযোগ ও অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বোর্ড থেকে রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজকে শোকজসহ বার বার সতর্ক করা হয়। তারপর ওই বছরই কলেজটির পাঠদান অনুমোদন বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, ওই কলেজে আবারও শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটি যেন আর কাউকে ভর্তি করাতে না পারে সে জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়গুলো স্বীকার করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সুমন। সম্প্রতি আবারও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।
আরও পড়ুন: খিলক্ষেতের রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজে নানা অনিয়ম
আজিজুর রহমান সুমন বলেন, বেশ কিছুদিন আগে প্রতিষ্ঠানটিতে চুরির ঘটনা ঘটে। কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলাও হয়। এসব নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের যারা ভালো চান না, তারা কিছু শিক্ষার্থীকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন।
তিনি জানান, কিছু সমস্যার কারণে বেশ কিছুদিন ক্লাস বন্ধ ছিল। তবে রোববার থেকে আবারও ক্লাস কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে ১৬ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৫ খ্রিষ্টব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, তাতে প্রতিষ্ঠানটি এআরএস ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বলে উল্লেখ করা হয়।