যেসব লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার ছাড়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
মানসম্মত শিক্ষার বিস্তারে আমাদের অর্জন যে সন্তোষজনক নয়, তা বিভিন্ন শিক্ষাবিদের বক্তব্যেই স্পষ্ট। অথচ ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হলে মানসম্মত শিক্ষায় সন্তোষজনক অগ্রগতি হতো। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর পেরিয়ে গেছে অনেক সময়। কিন্তু এর বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত মন্থর। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হলে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকার নিবেন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের বিষয়ে একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের মন্তব্যে তার হতাশাই ফুটে উঠেছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ৫ম শ্রেণির পরিবর্তে ৮ম শ্রেণিতে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। এছাড়া মাধ্যমিক স্তর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, এ লক্ষ্য কবে অর্জিত হবে তাও স্পষ্ট নয়।
শিক্ষানীতি উপেক্ষা করে ৫ম ও ৮ম শ্রেণি শেষে জাতীয়ভাবে যে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, তা কতদিন চলবে এটাও এক প্রশ্ন। এ দুটি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নোট বই, গাইডবই, কোচিং বাণিজ্য যে নতুন মাত্রা পেয়েছে তা উদ্বেগজনক।
শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য যে আইন প্রয়োজন, সেটি অজ্ঞাত কারণে ঝুলে আছে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে নোট বই, গাইডবই, কোচিং বন্ধের বিধান আছে। নোট, গাইড ও কোচিংয়ের কারণে মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন পাস ও বলবৎ হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা উল্লিখিত ব্যাধি থেকে মুক্ত হবে, আশা করা যায়।
জানা গেছে, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বাজেটে আলাদা বরাদ্দও নেই। এটি একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানে যথাযথ উদ্যাগ নিতে হবে। উচ্চশিক্ষার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মান নিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন। বিভিন্ন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্যদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।
সব মিলে শিক্ষাব্যবস্থায় যেসব অনিয়ম চলছে সেগুলো দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে পদক্ষেপ। দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার নিশ্চিত করা জরুরি। এর জন্য কী করণীয়, তা বহুল আলোচিত। মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করা না গেলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হবে।