শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। গত ৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাদকবিরোধী কমিটির কর্মপরিধি নির্ধারণ এবং বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে পাঠায়। ওই কর্মপরিকল্পনায় প্রতিদিন প্রতিটি ক্লাসে প্রথম পিরিয়ডে তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মাদকবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া মাদকবিরোধী কমিটি প্রতি মাসে একবার সভা করবে এবং মাসে দুইবার ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মাদকের বিশেষ করে ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে তরুণ, যুব ও ছাত্রসমাজকে দূরে রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথ সভা করে গত ১৩ মার্চ। সেখানেই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আর এই কমিটির কর্মপরিধি নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে। মূলত ওই সভার অংশ হিসেবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিক ও বার্ষিক মাদকবিরোধী কর্মপরিধি চূড়ান্ত করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মাদকের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে আমরা সব সময়ই শিক্ষকদের বলে থাকি। এরপর একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ হওয়ায় মাদকবিরোধী কাজে আরো গতি পাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
মাদকবিরোধী কমিটির মাসিক কর্মপরিধিতে উল্লেখ আছে, মাদকবিরোধী কমিটি প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবে। কমিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকের উপস্থিতিতে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি ও তৃতীয় সপ্তাহে একটি উদ্বুদ্ধকরণ সভার আয়োজন করবে। কমিটি পূর্ববর্তী সভার গৃহীত কার্যক্রম মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করবে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের তালিকায় মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে ক্লাস নেওয়াসহ মনিটরিং ও ফলোআপ করার জন্য কমিটি একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেবে। কমিটি নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে মাদকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে মাদকবিরোধী প্রচার যেমন স্থায়ী ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ইত্যাদি লাগানোসহ নিয়মিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্টিকার, বুকলেট ও লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা করবে। অ্যাসেম্বলিতে মাদকের ক্ষতির দিক নিয়ে আলোচনা করবে। এ ছাড়া মাদকবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা লিখন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালাবে কমিটি।
বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, প্রতি মাসে একবার মাদকবিরোধী কমিটির সভা, দুইবার উদ্বুদ্ধকরণ সভা, শ্রেণিকক্ষে প্রথম পিরিয়ডে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মাদকবিরোধী বক্তব্য এবং মাসে একবার মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানের আয়োজন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ সব প্রশিক্ষণে মাদকের কুফল বিষয়ে একটি সেশন চালু করার সিদ্ধান্ত হয় যৌথ সভায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে মাদকের অপব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বিদ্যমান টপিকগুলো আরো উন্নত ও তথ্যনির্ভর করার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা ও মহানগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আলোচনাসভায় মাদকাসক্তি থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার ব্যবস্থা নিতেও সিদ্ধান্ত হয়।
দুই মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেছিলেন, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ লাখ। বর্তমানে সর্বনাশা মাদক ইয়াবা যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভূমিকা অপরিসীম। পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাসেম্বলিতে মাদকের কুফলের বিষয়টি আলোচনা করা প্রয়োজন।
একই সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছিলেন, ‘মাদকের ভয়াবহতা রোধকল্পে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তুলনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা বেশি। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী আলোচনায় মাদকের কুফল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মাদকবিরোধী কার্যক্রম শুধু সুরক্ষা সেবা বিভাগের একার নয়। এসডিজি ৪-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।’
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ