কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় এমপিওভুক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আবেদন করা কয়েকটি বিএম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির দ্বৈত বিধানের কারণে এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বোর্ডের নির্দেশনায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা থাকলেও গত বছরে জারি করা এমপিও নীতিমালায় কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ করা হয়েছে। বোর্ডের নিয়ম মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় নীতিমালা অনুসারে কাম্য পরীক্ষার্থী সংখ্যায় এমপিওভুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই এমপিও আবেদন করেও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা। তাদের শঙ্কা কাম্য পরীক্ষার্থী না থাকায় এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাঠদানে অনুমতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনের ফরম পূরণে শিক্ষার্থী সংখ্যা উল্লেখ করতে হয়েছে। ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে গ্রেডিং করা হচ্ছে। নির্ধারিত চারটি সূচকের একটি হলো শিক্ষার্থী সংখ্যা। আর গ্রেডিংয়ে এ বিষয়ে ২৫ নম্বর রয়েছে। গতবছর জারি করা বিএম প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালায় বলা হয়, এমপিওভুক্তর যোগ্যতা হিসেবে প্রতি ট্রেডে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর ট্রেড ভিত্তিক শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করলে গ্রেডিংয়ে ২৫ নম্বর পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাম্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নীতিমালা অনুযায়ী পূরণ করতে পারেনি। কারণ তারা বোর্ডের নিয়ম মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছিলেন।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনে বিএম প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩০ জন এবং ড্রপআউটসহ ৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। তাই, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ২৬-২৭ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। অপরদিকে নীতিমালায় কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা বলা হয়েছে ৪০ জন। সে প্রেক্ষিতে আমাদের কাম্য শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সংখ্যা কম। তাই, এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক গ্রেডিংয়ে কম নম্বর দেয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার অপারেশন, সেক্রেটারিয়্যাল সায়েন্স, হিসাব রক্ষণ, ব্যাংকিং ও উদ্যোক্তা উন্নয়নসহ প্রতিটি ট্রেডে সর্বোচ্চ ৩০ জন এবং ড্রপআউটসহ মোট ৩৬ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষেও একই সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালায় প্রতি ট্রেডে কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪০ জন। অপরদিকে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইন আবেদন ফরমে যে তথ্য নেয়া হয়েছে তাতে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও বিএম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যার হিসাব ধরা হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, যেসব বিএম প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০১৬ ও ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে ৩০জন ভর্তি করা হয়েছে। তারা ২০১৮ ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা দিয়েছে। সে প্রেক্ষিতে ২০১৮ ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষার্থী সংখ্যা কম। কিন্তু এমপিওভুক্তির মূল্যায়নে ২০১৮ ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ধরে নম্বর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নীতিমালা জারির পর তা মেনে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। তারা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির দ্বিচারী বিধানের কারণে এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা।