নিরাপদ সড়ক চাই—এ দাবি দেশের সবার। সরকারও নিরাপদ সড়কব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্যোগ ও বক্তব্য দেশবাসী শুনেছে, জেনেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বহু আগেই সওজ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় দুর্ঘটনা কমাতে অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ব্ল্যাক স্পটগুলোকে চিহ্নিত করে সওজ অধিদপ্তর কাজ করছে। এই উদ্যোগের ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়কে আগের মতো আর অধিক দুর্ঘটনা ঘটছে না।
দেশের একমাত্র সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবহনের জন্য বাস দিয়ে থাকে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও সংস্থাটি থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাস দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য স্কুলসংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের সব স্কুলসংলগ্ন সড়কে গতিরোধক নির্মাণের দাবিও সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। বিভিন্ন সড়কে এটি নির্মাণের সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগ বা অন্যান্য বিভাগও সংশ্লিষ্ট। স্কুলের পাশে বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করার দাবিও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম রাজীবের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ঘাতক বাসটির মালিককেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ওই দুটি পরিবারকে।
বেপরোয়া গাড়ি চালনায় কারো প্রাণহানি বা কেউ আহত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সীমাহীন জরিমানার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। কেউ যদি গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তবে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত জাবালে নূরের দুটি বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। লাইসেন্সহীন ভুয়া চালকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য নিয়মিত রাস্তায় অভিযান চলছে। বিআরটিএ ও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। বিআরটিএর সেবা দেওয়ার সময়সূচি বাড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। সড়কমন্ত্রী প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সরকারও আন্তরিকভাবে নিরাপদ সড়ক চায়। এ জন্য জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার বিকল্প নেই।
নৌপরিবহনমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া, গাড়ির মালিককে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া, জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালককে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার দাবি পূরণ হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরাও বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোনো দাবির সঙ্গে তাঁদের দ্বিমত নেই। তবে অবকাঠামো নির্মাণের দাবি বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হবে। এটা রাতারাতি করা যাবে না। এ জন্য সময় লাগবে। কিন্তু সময় যাতে বেশি না লাগে তার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যতটুকু করা দরকার আমরা করব।’
আন্দোলনকারীদের তিন নম্বর দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করে চলাচলে বিকল্প ব্যবস্থা করা। এরই মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলে ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার নির্মাণ করার কাজেও গতি এসেছে। শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে শিক্ষার্থীদের বাসে তুলতে হবে এবং দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করার দাবি বাস্তবায়নেও সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার অভাব নেই।
লেখক :অতিরিক্ত সচিব, সড়ক মন্ত্রণালয়
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ