আজ ১ জানুয়ারি, পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০২০। সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রাণের উৎসব। বছরের প্রথম দিনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই। কিন্তু এ বিষয়টি একটা সময় সত্যিই অকল্পনীয় ছিল। প্রচ্ছদ-অলংকরণ ও নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে যাবে আজ সকল প্রাণে। শিক্ষার্থীদের মন আজ আনন্দে উদ্বেলিত, চোখে-মুখে নতুন কিছু জানবার প্রবল আগ্রহ বা কৌতূহল। কোটি কোটি প্রাণের এ উল্লাস শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়, গ্রামীণ পশ্চাৎপদ জনপদেও এ উল্লাস মূর্ত। গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে শিক্ষার্থীদের নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য সত্যিই অভূতপূর্ব। প্রতি বছরের ন্যায় আজও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ৪ কোটি ২৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করবে। এজন্য সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ১০৫০ কোটি টাকা।
২০১০ থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে ৩৩১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৬৯ কপি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীর মাঝে সরকার বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ বিশ্বে অতুলনীয়।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন-সারথি তাঁর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় পর্যবেক্ষণ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঠিক দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান এবং এনসিটিবির সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে দৃপ্ত পায়ে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করেছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে এনসিটিবি জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ প্রণয়ন করেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড রাষ্ট্রীয় আদর্শ, জাতীয় লক্ষ্য, সমকালিন জীবনের চাহিদা ও চলমান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ আধুনিক সৃজনশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ৬৪৩ টি পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠন-পাঠন সামগ্রী নতুনভাবে প্রণয়ন ও পরিমার্জন করেছে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন বর্তমান সরকারের একটি অভিনব সাফল্য। ২০১৭ থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৩ হাজার ৪৬৯ কপি ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের (১ম-২য় শ্রেণি) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫টি মাতৃভাষায় (চাকমা, মারমা, গারো, সাদরি ও ত্রিপুরা) শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪৪৫ কপি পাঠ্যপুস্তক সরকার বিনামূল্যে বিতরণ করেছে।
মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে পাঠ্যপু্স্তকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জীবন ও কর্ম, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংযোজন করা হয়েছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা তথা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। কারিগরি শিক্ষা ও নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিষয়টি নতুন শিক্ষাক্রমে অন্তভূর্ক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অন্তভুর্ক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজন। এসডিজি-২০৩০ বাস্তবায়ন তথা শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্যপূরণ এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
লেখক: মো. জাকির হোসাইন, গবেষণা কর্মকর্তা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড