শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট : সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি মোবাইল অপারেটররা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা মহামারির এই সময়ে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বা কম দামে ইন্টারনেট দেওয়ার বিষয়টি এখনো আবেদন ও আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সম্প্রতি বলেন, এই সংকটকালে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়াটা ব্যয় নয়, হবে বিনিয়োগ। তবে এখানে ব্যয়ের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। শনিবার (১১ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন কাজী হাফিজ ও শরীফুল আলম সুমন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এরই মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বা কম দামে মোবাইল ইন্টারনেট চেয়েছে। অবশ্য এরই মধ্যে দেশের ৫৮৭টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত মাস থেকে ওয়াই-ফাই কানেকশনে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সচেতন নাগরিক সমাজ থেকেও একই আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তারা ইন্টারনেটের ওপর বহাল ভ্যাট-ট্যাক্স, স্পেকট্রাম সংকটসহ নানা প্রতিকূলতার কথা বলছে।

জানা যায়, দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। করোনার এই দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে তাদের প্রায় সবার ইন্টারনেটের প্রয়োজন। কিন্তু এর উচ্চ দাম ও নেটওয়ার্কের গতি কম হওয়ায় অনেকেই অনলাইনে পড়ালেখায় অংশ নিতে পারছে না।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিকের প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব ক্লাস সময়মতো দেখতে না পারলে পরে ইউটিউবেও দেখার সুযোগ আছে। তবে এ জন্যও দরকার ইন্টারনেট।

উচ্চশিক্ষার ৩২ লাখ শিক্ষার্থী পড়েছেন সবচেয়ে বেশি সমস্যায়। গত এপ্রিল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। চলতি মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা প্রয়োজনীয় গতিসহ ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। মাধ্যমিক ও মাদরাসার দেড় কোটি এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অবস্থাও একই। ইন্টারনেট ছাড়াও সব শিক্ষার্থীর কাছে ডিভাইস বা স্মার্টফোন না থাকাও বড় সমস্য। 

সম্প্রতি ইউজিসি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে। ল্যাপটপ আছে ৫৫ শতাংশের। অন্যদিকে সব শিক্ষকের ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার উপযোগী ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে প্রশাসনিকভাবে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বা সুলভে ইন্টারনেট দিতে প্রয়োজনে কম্পানিগুলোর সিএসআর ফান্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গত সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভায়ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে মোবাইল অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফ্রি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনও করেছে তারা।’ শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বা কম দামে ইন্টারনেট দেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও মোবাইল অপারেটরগুলোর কোনো উদ্যোগ তাঁরা দেখছেন না বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  মো. সাহাব উদ্দিন এ বিষয়ে  বলেন, ‘গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউজিসির পাওয়া একটি চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সুলভে ইন্টারনেট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে নিজেদের সংগঠন এমটবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে।’ তবে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তিনি। এর কারণ হিসেবে সাহাব উদ্দিন বলেন, ব্যান্ডউইডথ কেনাসহ গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর পথে বেশ কিছু খাতে ব্যয় রয়েছে। রাজস্বও দিতে হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে মোবাইল অপারেটরদের অবস্থান জানতে চেয়ে এমটবের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স  অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুলভমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করেছি। এ ছাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য রবি টেন মিনিটস স্কুল লাইভ ক্লাস নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে ভ্যাট-ট্যাক্সের ভূমিকা আছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে আরো স্পেকট্রাম প্রয়োজন হবে। ভ্যাট-ট্যাক্স অব্যাহতিসহ বিনা মূল্যে অতিরিক্ত স্পেকট্রাম বণ্টন করা হলে তাঁরা ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে জানান তিনি।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। পেলে আলোচনা হতে পারে।’

আরেক অপারেটর গ্রামীণফোনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন জানান, সরকারি ৫৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বিনা মূল্যে ওয়াইফাই সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা পেতে সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন করেছে। বিষয়টি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য সুলভে অথবা বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া প্রসঙ্গে রফিকুল মতিন বলেন, ‘মোবাইল ফোন কম্পানিগুলো থেকে বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য সুলভে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করাটাই ভালো হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057380199432373