শিক্ষিকার বদলি রুখতে অনশনে ছাত্রীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মাদরাসার ছাত্রীরা জানতে পারে তাদের প্রিয় শিক্ষিকা, স্কুল ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এটুকুই যথেষ্ট ছিল, ১০ আগস্ট থেকে তারই প্রতিবাদে রীতিমতো রাস্তায় নেমেছে এসএআরএম গালর্স হাই মাদরাসার মেয়েরা। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

স্কুলের বারান্দা থেকে দেবকুন্ড গ্রাম যেখানে পেরেছে দেয়া হয়েছে পোস্টার। চলেছে মিছিল করে স্কুল পরিক্রমা। তাদের একটাই কথা, ‘‘আপনি কোথাও যাবেন না ম্যাম!’’

প্রধান শিক্ষিকাকে সামনে রেখে হাতে কাগজে লেখা পোস্টার নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত। আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। আমরা আপনাকে ছাড়বো না। ম্যাম আপনি আমাদের। অন্য কারো নয়। এই পোস্টারের আবেদনে কাজ না হওয়ার পরে টোটোয় মাইক বেঁধে গ্রামের রাস্তায় আট কিলোমিটার পদযাত্রা। দাবি, ‘‘ম্যাম আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবেন না।’’ গ্রামবাসীদের সেই আন্দোলনে সামিল করতে এই পদযাত্রা। পরে ১৫ অগষ্ট বেলা ১১টা নাগাদ তাতেও কাজ না হওয়ায় স্কুলের সামনের গেটে অনশনের ঘোষণা করে ছাত্রীরা।

এত চাপ নিতে পারেননি বেলডাঙা দেবকুণ্ড এসএআরএম গালর্স হাই মাদরাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। তিন দিনের আন্দোলনে হার মানলেন মাদ্রাসার শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার মাইক হাতে ঘোষনা করলেন, ‘‘তোদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’’ ছাত্রীদের বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়লো এলাকা।

মাদরাসার ছাত্রীদের সঙ্গে মিশে কাজ করছিলেন দশ বছর ধরে। বেলডাঙার প্রত্যন্ত গ্রাম দেবকুন্ড, ১২০০ ছাত্রীর তিনি এক প্রকার নয়নের মনি। হবেন নাই বা কেন? মাদরাসা বোর্ডের পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ উত্তীর্ণ ছাত্রী। কেউ কোনোদিন ভেবেছে। স্কুলে চলছে নাটক, গান, নৃত্য,কুইজ,বিতর্ক। ছাদে ফুলের বাগান। মাদরাসার প্রাঙ্গনে তৈরি হয়েছে স্থায়ী সাংস্কৃতিক মঞ্চ। সেখানে নাবালিকা বন্ধ করতে নাটক চলছে। সেই নাটক দেখছে সেই অভিভাবকরা যারা আগে নিজের সন্তানের নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দিয়েছেন। দেবকুন্ড গ্রামের মানুষ, ছাত্রী ও তাদের পরিবার তাই প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। বৃহস্পতিবার মাদরাসায় এসে প্রধান শিক্ষিকার ঘরে অবস্থান শুরু করেন।

গত ১০ আগস্ট হাতে পোস্টার নিয়ে শিক্ষিকার বদলি রোখার চেষ্টা করে যে ছাত্রীরা তারা বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা দিবস পালনের পর চোখের জল সামলাতে পারেনি। প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে ধরে ২০০ ছাত্রী ক্রমান্বয়ে কেঁদে চলছে। ‘‘দিদিমনি আমরা কী দোষ করলাম।’’ আমাদের একেবারে ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা কেন হলো। তার জবাব আপনাকে দিতে হবে। এই কথা শুনে শিক্ষিকাও কেঁদে চলেছেন। তাকে তার সহকারী শিক্ষিকা থেকে পরিচালন সমিতির সদস্যরাও বুঝিয়ে চলেছেন। অবশেষে বরফ গলল।

দেবকুণ্ড এসএআরএম গালর্স মাদরাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘‘ওদের সোমবার থেকে স্কুলের পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার সকা‌লে ওরা কেউ খেয়ে আসেনি। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ওরা কেঁদে যাচ্ছে। আর কি নিজেকে বেঁধে রাখতে পারি! তাই থেকে গেলাম।’’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055139064788818