রুটিনমাফিক ক্লাস শেষ হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। কিন্তু সাত মাসেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। মে মাসে চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ায় কথা থাকলেও হয়নি এখনো। কবে পরীক্ষা হবে, সেই বিষয়েও অন্ধকারে শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে গেছে, মূলত বিভাগের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জটিলতার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সবার সম্মতিক্রমে প্রভাষক আখতারুজ্জামানকে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান করা হলেও সম্প্রতি তাঁকে অপসারণ করে নতুন কমিটি গঠন করায় জটিলতা বেড়েছে। আর নতুন কমিটির বিষয়টি নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষকরা।
অপসারণ বিষয়ে বিভাগ সূত্র বলছে, প্রথম পর্বের একটি সেমিনারপত্র মূল্যায়নে নম্বর কমবেশির বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করলে তদন্তে কমিটি গঠিত হয়। দীর্ঘ পাঁচ মাসেও কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আর শিক্ষার্থীদের আনীত অভিযোগের বিষয়টির সুরাহা না হলেও নতুন কমিটি গঠনকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মনে করছেন অন্য শিক্ষকরা।
বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৩০ অক্টোবর আখতারুজ্জামানকে সরিয়ে নতুন পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুদা খাতুন জুঁইকে। শিক্ষকদের সবার সম্মতিতে একাডেমিক সভায় পরীক্ষা কমিটির চেয়ারমান নির্ধারিত হওয়ার বিধান। কিন্তু পরীক্ষা কমিটির নতুন চেয়ারমান নির্ধারণের প্রস্তাব এলে শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এতে বিষয়টি অনিষ্পন্নই থেকে যায়। আর চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে দিন-তারিখ ঘোষণার বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সূত্র জানায়, গত ১৮ মার্চ শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় সবার সম্মতিতে দ্বিতীয় পর্বের এমএফএ পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় আখতারুজ্জামানকে। ওই সময় ১৩ মে পরীক্ষার সময়সূচিও ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তে কিছুদিন পর প্রথম পর্বের ফল প্রকাশিত হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সেমিনারপত্র মূল্যায়নের নম্বর কমবেশি দেওয়ার অভিযোগ তোলে। এই ঘটনা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু সেই কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তাই বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অন্যান্য অনুষদের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে কেউবা প্রবেশও করেছে। কিন্তু চারুকলা অনুষদের মাস্টার্স দ্বিতীয় পর্ব এখনো শেষ হয়নি। বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম নীপা বলেন, ‘পরীক্ষায় বসতে না পারায় অন্যদের থেকে কিছুটা পিছিয়েছি। অনেক বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হলেও আমরা এখনো ঝুলছি। কর্মক্ষেত্রেও প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিতে পারছি না। এই জটিলতার অবসান হোক। আমরা স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে চাই।’
বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আখতারুজ্জামানকে পরীক্ষার কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়। তখন কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকলেও পরবর্তীতে তাঁকে সরাতে সক্রিয় হয় শিক্ষকদের অন্যপক্ষ। যারা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উসকানি দিয়ে প্রথম পর্বের ইনকোর্স পরীক্ষার প্রকাশিত নম্বর নিয়ে অভিযোগ তোলে। আর এর সূত্র ধরেই তাঁকে সরিয়ে নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে যান কয়েকজন শিক্ষক, যার বিরোধিতায় রয়েছেন অন্য শিক্ষকরা।
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম পর্বের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সেমিনারপত্র মূল্যায়নে মডারেটর ছিলাম। দ্বিতীয় পরীক্ষকের মূল্যায়নের পর গড় করে মার্কস নির্ধারণ করা হয়। কাজেই যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটা অমূলক। মূলত অন্য শিক্ষকদের ষড়যন্ত্রে আমাকের সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। তদন্ত কমিটি আমার মতামতও নেয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টির সুরাহা করেই নতুন কমিটি গঠন করা হোক। শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ভোগান্তিতে পড়ুক সেটা আমরা চাই না।’
বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা খাতুন জুঁই বলেন, ‘কিছু জটিলতা রয়েছে। আর সেই জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে বিলম্ব হচ্ছে। সেই বিষয়ে আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে পারব না। জটিলতা বাড়ুক আমরা চাই না।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিভাগে এসে দেখা করার পরামর্শ দেন তিনি।