বেশ অনেক বছর হয়ে গেল, বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের মেধা যাচাইয়ের একমাত্র পরিমাপক হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে বহুলাংশে গ্রেডনির্ভর। ভালো গ্রেড প্রাপ্তিতে সরকার, সংশ্লিষ্ট স্কুল, কলেজ এবং সর্বোপরি ছাত্রছাত্রী, তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সকল সদস্য বেজায় খুশি হলেও, শিক্ষা অর্জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন হচ্ছে না বলে ধারণা করা হয়।
গ্রেড পদ্ধতির সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকগুলির একটি হলো সম্মানিত শিক্ষকের সিংহভাগ সময়ই শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে পরীক্ষায় কারা কোন গ্রেড পাবে বা না পাবে সেদিকেই মনোযোগ থাকে অতিমাত্রায়। ছাত্রছাত্রীরা কেন ’বি’ বা ’সি’ গ্রেড পেল, কী কী তার ঘাটতি ছিল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কোনো পর্যালোচনা করা হয় না। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আবার এটিও সত্য—বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় ভালো গ্রেড কিভাবে পাওয়া যায় তার বিভিন্ন টিপস রপ্ত করে। পাঠ্যবইসমূহ না পড়েই অতি অল্প চেষ্টায় ভালো গ্রেড অর্জন করে ফেলে। কিন্ু্তু বুদ্ধি বিকাশের তেমন কোনো সুযোগ তাদের মেলে না।
অধিকাংশ সময়ই ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক এবং শিক্ষকরা ভালো গ্রেড পাওয়ার জন্য তাদেরকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা করার সময় তাদের মাথার মধ্যে মূলত কাজ করে কিভাবে ভালো গ্রেড অর্জন করে তাঁদের খুশি করা যায়। এর ফলে তারা ক্রমান্বয়ে সৃজনশীল কাজ করা থেকে বা নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সর্ব পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় ভুলকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। কোনো শিক্ষার্থীর ভুল যে নতুন কিছু শেখার একটি সিঁড়ি হতে পারে—এই ধারণা অনেক শিক্ষকের ভাবনার মধ্যে আসে না। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভুলের জন্য তাদের তিরস্কার না করে বরং ভুল শোধরানোর উপায় শেখানোর সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এখনই সময় গ্রেডনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এটি একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে ।
ঢাকা