শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আফগানদের হারিয়ে বাংলাদেশের জয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মধ্যরাতে শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম হঠাৎ রূপ নিল নাটকীয়তায়! ইতিহাসের পাতা থেকে রোমান অভিনেতারা মুস্তাফিজ, শেনওয়ারিদের বেশে নেমে আসেন ২২ গজের উইকেটে। হৃৎপিণ্ড বন্ধ করে দেওয়া মধ্যরাতের ক্রিকেটীয় নাটকে নায়ক হতে পারতেন শেনওয়ারি। কিন্তু গ্ল্যাডিয়েটর সেজে মহানায়ক হলেন মুস্তাফিজুর রহমান। স্বপ্নের জয় উপহার দিয়ে মুস্তাফিজ এখন বাঙালির স্বপ্নের নায়কও। ইনিংসের শেষ বলে জিততে আফগানিস্তানের দরকার ৪ রান। বাংলাদেশের দরকার ডট বল। উইকেটে শেনওয়ারি। বোলিংয়ে কাটার মাস্টার।

পিনপতন নীরবতায় বলটির দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। প্রার্থনায় ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। হতাশ করেননি কাটার মাস্টার। ঠাণ্ডা মাথায় শেনওয়ারিকে বোকা বানিয়ে তুুলে নেন ডট বল। সেই সঙ্গে শেষ ওভারের জাদুতে স্ব্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতে নেয় ৩ রানে। অবিশ্বাস্য এই জয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনালের স্বপ্ন টিকে রইল। তার আগে ২৬ সেপ্টেম্বর আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অলিখিত সেমিফাইনালে জিততেই হবে টাইগারদের। দুই দলের জয়ী দল ফাইনাল খেলবে দুবাইয়ে। পাকিস্তানকে গতকাল ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

দুবাইয়ের বিমানে চড়ার সময় ইমরুল কায়েশের ভাবনায় কী ছিল? আবুধাবির প্রচণ্ড গরম, না নিজেকে প্রমাণ করা। হঠাৎ সুযোগ পাওয়ার বাড়তি চাপে যে ছিলেন, তা পরিষ্কার। রশিদ খান, মুজিব, নবীদের বিপক্ষে ব্যাটিং দেখে বোঝার কোনো উপায় ছিল না চাপে আছেন তিনি। বরং চাপকে সামাল দিয়ে জয় করেছেন সব বাধা। দেশসেরা দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে দল যখন দিশাহারা, তখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গী করে প্রচণ্ড গরমে মাথা ঠাণ্ডা রেখে অনবদ্য ব্যাটিং করেছেন। শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের ধীরলয়ের উইকেটে তার ক্যারিশমার তুলনায় আসে শুধু তামিম ইকবালের ভাঙা কব্জিতে ব্যাটিংয়ের দৃষ্টান্তটি।

এক বছর পর রঙিন পোশাকে খেলতে নামলেও মনে হয়নি এতদিন দলের বাইরে ছিলেন। বরং রশিদের ঘূর্ণিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে নিয়ে যান ২৪৯ রানে। ৮৫ রানে লিটন, নাজমুল, মিঠুন, মুশফিক ও সাকিবকে হারিয়ে দল যখন পুরোপুরি কোণঠাসা, তখন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাহমুদুল্লাহ ও তিনি যোগ করেন ১৫৩ বলে ১২৮ রান। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে যে কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা রেকর্ড। আগেরটি ১৯ বছর আগে ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৩ রানের।

আকাশসম চাপ নিয়ে খেলতে নেমে ইমরুল জয় করেছেন সব বাধা। পিছিয়ে ছিলেন না মাহমুদুল্লাহও। ম্যাচসেরা ক্রিকেটার বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৃজনশীলতার সর্বোচ্চটা দেখিয়ে ‘মি. কুল’ খেলেন ৮১ বলে ৭৪ রানের অসাধারণ ইনিংস। তিনটি বাউন্ডারি মারলেও আকর্ষণ ছিল রশিদের পরপর দুই ওভারে দুই ছক্কার মার। যার একটি ছিল ৮৭ মিটার এবং অপরটি ৮১ মিটার। ১৬০ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে হাফসেঞ্চুরিটি ২০ নম্বর এবং ইমরুলের ৭১ ম্যাচ ক্যারিয়ারে ১৫ নম্বর। ইমরুলের ৮৯ বলে ৭২ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার। অবশ্য যে ওপেনারদের ব্যর্থতায় সুযোগ পেয়েছেন ইমরুল ও  সৌম্য সরকার, গতকাল দুজনই খেলেছেন। লিটন ৪৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে পার পেলেও ব্যর্থতার খোলশে বন্দী হয়ে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সাজঘরে ফিরেছেন এক অংকের ইনিংস খেলে। তিন ম্যাচ মিলিয়ে তার রান ২০ (৭, ৭, ৬)।

২৫০ রান তাড়া করে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে জেতেনি আফগানিস্তান। মাশরাফিদের দেওয়া সেই টার্গেটে খেলতে নেমে ৭.২ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট এবং ২৪.৪ ওভারে ৮৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান হাশমতউল্লাহ শাহিদ ও অধিনায়ক আজগর আফগান। দুজনে চার নম্বর উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৭৮ রান। অধিনায়ক আজগরকে সাজঘরে ফেরত পাঠান টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি ব্যক্তিগত ৩৯ রানে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচে। জুটির আগে জীবন পেয়ে অবশ্য ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ শেহজাদ। হাশমতউল্লাহ আসরে টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেন নিজেকে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৭ রানের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৮ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন ৯৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৪৩.৩ ওভারে মাশরাফির অফ কাটারে বোল্ড হওয়ার আগে হাশমতউল্লাহ খেলেন ৭১ রানের ইনিংস। শেষ ওভারে ৮ রান নিতে ব্যর্থ হয়ে আফগানিস্তানের ইনিংস থেমে যায় ২৪৬ রানে।  

আফগানিস্তানের পর পাকিস্তানকে হারিয়ে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052869319915771