শ্রমিকদের জন্য দরকার সেফটি ট্রেনিং কোর্স

রহমান মৃধা |

‘সেফটি রিসন ইন প্লেস’ বলে একটি কথা আছে, সে বিষয়ে কি আমরা সবাই সচেতন? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে কন্সট্রাকশন থেকে শুরু করে সব ধরণের ইন্ডাস্ট্রিতে এ বিষয় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সর্বত্র কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে অথচ সরকার বা সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কতটুকু সচেতন? আর কেউ বিষয়টি নিয়ে না ভাবলেও আমার বন্ধু সামসুদ্দিন সুমি (IEB, Fellow) কিন্তু এই বিষয়ে বেশ চিন্তিত। সে নিজে একজন  ইঞ্জিনিয়ার এবং তার ভাবনা থেকে সে এমনটি বর্ণনা করেছে।

তার মতে, ‘আমার মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করে, যখন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় নির্মাণ শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর দেখতে পাই। কয়েকদদিন আগে খবরে দেখলাম, ম্যানহোলের মধ্যে কাজ করতে নেমে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ম্যানহোলের ভিতরে কার্বন মনোক্সাইডসহ বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে, তাই ম্যানহোলের ঢাকনা খুলেই নেমে পড়া কত বিপজ্জনক, তা এই শ্রমিক ভাইয়েরা জানতেন না। ম্যানহোলের ঢাকনা খোলার অনেক সময় পর অথবা কৃত্রিম ভাবে বাতাস প্রবাহিত করার পর নামলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। উঁচু বিল্ডিঙের কাজ, বিদ্যুতের কাজ, আগুন নেভানোর প্রাথমিক কাজ ইত্যাদি ব্যাপারে একদিনের বাধ্যতামূলক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে শ্রমিকেরা যেমন নিজের দুর্ঘটনার কবলে পড়ার থেকে বেঁচে যেতে পারবেন, তেমনি নির্মাণ কাজের আশেপাশের মানুষের হঠাৎ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কবল থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবে। বেশ কয়েক বছর আগে আমি মগবাজার ইস্কাটনে প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটার সময় আমার মাথার একটু সামনে একটা বড় ইটের টুকরো এসে পড়ল। সম্ভবত যা ছিল পাশের নির্মাণাধীন দশ তালা বিল্ডিংয়ের ওপর থেকে। আর মাত্র এক পা বেশি এগোলে আমার মাথার ওপর ওই টুকরা পড়ত এবং আমি মারা যেতাম।’ 

আমাদের চারপাশে এই রকমের অনেক মৃত্যুফাঁদ আছে, যার একটা বড় কারণ নির্মাণ শ্রমিকদের অসচেতনতা। রাজধানী শহরের উন্নয়নে নির্মাণ কাজের পরিমাণ কয়েক শত গুণ বাড়বে আগামী বছর গুলোতে, তাই সব নির্মাণ শ্রমিকদের একদিনের একটি নির্মাণ নিরাপত্তা কোর্স করা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, যেখানে শ্রমিকেরা ভিডিও, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের ব্যবহারে সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করতে পারে। এই রকম একটি সেফটি ট্রেনিং কোর্স বাধ্যতামূলক পৃথিবীর অনেক দেশেই দেওয়া হয়ে থাকে, যেখানে সবাই একদিনের এই কোর্সে অংশ গ্রহণ করে এবং তাদের নিরাপত্তা গ্রিন কার্ড দেওয়া হয় এবং এই কার্ড ছাড়া কেউকে কোন কন্সট্রাকশন সাইটে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

এই গ্রিন কার্ড পাঁচ বছর মেয়াদি। যার ফলে পাঁচ বছর পরে তার আবার এই কোর্স করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। এই ভাবে সেফটি ইন প্লেসের নিশ্চয়তা করা খুবই দরকার, নিজের ও অন্যের স্বার্থে। দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের একটি নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব হচ্ছে এই রকম একটি কোর্সের আয়োজন করা এবং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা। বন্ধু সামসুদ্দিনের এই মহান উদ্বেগের পাশে দাঁড়াতে দেশের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, একই সাথে দেশের প্রতিটি স্তরে দেখতে চাই প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সঙ্গে লিখিত ‘standard operating procedure (SOP) is a set of step-by-step instructions compiled by an organization to help workers carry out complex routine operations. SOPs aim to achieve efficiency, quality output and uniformity of performance, while reducing miscommunication and failure to comply with industry regulations.’
 
লেখক : সুইডেনপ্রবাসী


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028829574584961