ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা তুলতে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার তিন শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও হিসাবরক্ষণ অফিস কে ম্যানেজ করার কথা বলে শিক্ষকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন তারা। পরে বিষয়টি জানাজানি হলেও শিক্ষকদের থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেননি শিক্ষক নেতারা।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রতি তিন বছরে শ্রান্তি ও বিনোদনের জন্য ১৫ দিন ছুটিসহ শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা পেয়ে থাকেন। এ বছর উপজেলার ২২৭ জন শিক্ষক এই ভাতা পেয়েছেন। এই শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা উত্তোলনে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস ম্যানেজ করার কথা বলে ভাতা পাওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে তিন শিক্ষক নেতা ৩০০টাকা করে নিয়েছেন। ওই তিন শিক্ষক নেতা হলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হাটখোলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রকিবুজ্জামান মিলন, মধ্যেরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. গাফফার শেখ এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও ছোলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করলে ভাতার টাকা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ২২৭ জন শিক্ষকদের ভাতার প্রায় ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৬০ টাকা প্রাপ্তিতে জটিলতা দূর হয়।
একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে অভিযোগ করেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভাতার টাকা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে ছাড় হলেও উৎকোচের প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ফেরত দেননি ওই তিন শিক্ষক নেতা।
এ ব্যাপারে দাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, শিক্ষক নেতা রকিবুজ্জামান মিলন, আ. গাফফার শেখ এবং মো. মোশাররফ হোসেনের নির্দেশনায় আমার এবং আমার বিদ্যালয়ের এক ম্যাডামের নির্ধারিত ৬০০ টাকা ছোলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই তিন শিক্ষক নেতার কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
তবে, চাঁদা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রকিবুজ্জামান মিলন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।
অপর শিক্ষক নেতা আ. গাফফার শেখ টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির সাবেক সভাপতি ভাতা উত্তোলনে সংশ্লিষ্ট দফতরের সাথে একটি মৌখিক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে কিছু শিক্ষকের কাছ থেকে আমি টাকা তুলেছি। তবে অধিকাংশই টাকা দেয়নি। আমাদের তিন জনের কাছে উত্তোলন করা টাকাটা জমা আছে। পরবর্তীতে টাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবদুল আওয়াল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভাতা নিয়ম মাফিক ছাড় দেয়া হয়েছে। টাকা দাবির বিষয়টি ভিত্তিহীন।
এছাড়া শিক্ষক নেতা রকিবুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে উপজেলার ৫৫ জন দপ্তরি কাম প্রহরীর গত ঈদুল ফিতরের বোনাস বাবদ ১০ লাখ টাকা অফিস থেকে ছাড় করার কথা বলে গত ২৮ জুন ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা ঘূষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।