শ্রেণি বিভাজনের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী বাড়ছে। কমছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করতে প্রাথমিক পর্যায়ে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে সরকার। শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই, শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ আরও নানা কর্মসূচি আছে। তবে শিক্ষিতের হার বাড়লেও শিক্ষা পদ্ধতিতে অব্যবস্থার নানা অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। দৈনিক সমকালে দেয়া সাক্ষাৎকারে  দেশে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা, মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্বলতা নিয়ে কথা বলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ  সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রচলিত পদ্ধতিতে যে তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা (বাংলা, ইংরেজি, মাদ্রাসা) চালু রয়েছে, সেটা শিক্ষাক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :এই তিন ধারার শিক্ষা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কেননা শিক্ষা বিভাজন তৈরি করবে না। অথচ এই তিন ধারার শিক্ষা শ্রেণি বিভাজনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেই শ্রেণি বিভাজনকে আরও গভীর, বিস্তৃত করছে। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ উল্টো হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষা সামাজিক ঐক্য তৈরি করবে, মানুষের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য বাড়াবে এবং একটা জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করবে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ঐক্যবদ্ধ করছে না। এই শিক্ষা বিভক্ত করছে। এই তিন ধারা পাকিস্তান আমলেও ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানি ধারাকে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষায় নতুন ধারা আনার স্বপ্ন ছিল মাতৃভাষার মাধ্যমে। কিন্তু সেটা হয়নি। কারণ শ্রেণি বিভাজন আগে যতটা না ছিল, বাংলাদেশ হওয়ার পরে সেটা আরও বেড়েছে। এই শ্রেণি বিভাজন যত বাড়ছে, তিন ধারার শিক্ষা ততই পরস্পর থেকে দূরবর্তী হচ্ছে।

বিভাজনটা কীভাবে হচ্ছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে, তাদের লক্ষ্য থাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কেননা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা সুবিধা করতে পারে না। ওখান থেকে তারা টাকার জোরে বিদেশে চলে যাবে। তারপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আর দেশে ফিরবে না। তার মানে মেধা পাচার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিত্তবানের ঘরের ছেলেমেয়েরাই অধিক সুযোগ পাচ্ছে। 

এদিকে বাংলার যে মূলধারা, সেই মূলধারা খুব দুর্বল হয়ে গেছে। যেমন- ইতিহাসের চর্চা শিক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। আমরা যারা ব্রিটিশ আমলে বড় হয়েছি, তারা ভারতবর্ষের ইতিহাস যেমন পড়তাম, তেমনি ইংরেজদের ইতিহাসও পড়তাম। এখন ইতিহাসকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। 

বাংলা বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন নিয়ে সর্বশেষ যে ঘটনাটা ঘটল, হেফাজতে ইসলামের দাবিতে সেটা শুধু অপ্রত্যাশিত নয়, অবিশ্বাস্য। পাকিস্তান আমলে এ রকম পরিবর্তন হলে তীব্র প্রতিবাদ হতো। সেটা এখন মেনে নেওয়া হয়েছে। 

হেফাজতওলারা ইংরেজি মাধ্যমে কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। ওটা নিয়ে তাদের কোনো দাবি নেই। তাদের দাবি বাংলা মাধ্যম নিয়ে। ফলে আমরা মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ, যুগোপযোগী করার কথা বলছি। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাই বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাদের যে পাঠ্যপুস্তকের ধারণা, তারা সেটা এখানে নিয়ে আসছে। 

হেফাজতের যারা আন্দোলন করছে কওমি মাদ্রাসার ধারা নিয়ে, সেটা অত্যন্ত দুর্বল ধারা। তারা কী পড়ায় তারাই জানে। ওই ধারা থেকে যারা বেরিয়ে আসছে, তারা কিন্তু কর্মের বাজারে ঢুকতে পারছে না। এমনিতেই দেশে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। অথচ যারা কওমি মাদ্রাসায় ধর্ম কিংবা ধর্মের প্রতি আকর্ষণের কারণে নয়, দারিদ্র্যের কারণে পড়ছে। তারা ওখান থেকে বেরিয়ে উৎপাদনের কোন খাতে অংশ নেবে, সেটা খুঁজে পায় না। তাদের মধ্যে অহমিকা থাকে- তারা কেবল শিক্ষিত নয়, ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত বলে। কাজেই তারা পবিত্র। এ জন্য তারা কায়িক শ্রম, কৃষি কিংবা শ্রমনির্ভর কাজে যেতে চায় না। এ কারণেও দেশে বেকারের বাহিনী তৈরি হচ্ছে। এখন আবার কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের সমমর্যাদা দিয়ে দেওয়া হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী যে ছাত্র নানা সাধনা, পরীক্ষা, কোর্স করে মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়েছে, তাদের সমমর্যাদা তারা (কওমি মাদ্রাসা) দাবি করবে। অথচ তারা কীভাবে লেখাপড়া করছে, সেটা কেউ জানে না। কর্মক্ষেত্রেও তারা প্রবেশের চেষ্টা করবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এসব শ্রেণি বিভাজন যদি দূর না করা যায়, তাহলে আমরা কখনও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। শিক্ষা যত বাড়বে, বৈষম্য তত বাড়বে। 

প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষার ফলের পর গ্রাম-শহরের স্কুল-কলেজগুলোতে ফলের তারতম্য দেখা যায়। বিশেষ করে ইংরেজি, অঙ্ক কিংবা বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে এ বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :এটাও সেই শ্রেণি বিভাজন। শহরে সুযোগ বেশি। যারা সুযোগ পাচ্ছে, তারাই শহরে আসছে। আর শহরে যারা গরিব, তারা আবার ভালো ফল করতে পারে না। শিক্ষা এখন পণ্য হয়ে গেছে। তারাই শিক্ষিত হচ্ছে, যারা শিক্ষা কিনতে পারছে। 

সেটা কীভাবে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :একসময় একটা শহরে সবচেয়ে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল সরকারি স্কুল। প্রাইভেট স্কুল থাকলেও মানুষ প্রথমে তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে দেওয়ার চেষ্টা করত। না পেলে প্রাইভেট স্কুলে দিত। এখন প্রাইভেট স্কুলই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি স্কুলগুলো সংখ্যায় বাড়েনি। তাদের মান উন্নত করা যেত। সেটাও হয়নি। এখন পাবলিক স্কুল-কলেজে পড়াশোনা হয় না, শিক্ষার্থীদের যেতে হয় কোচিং সেন্টারে। আর সেখানে যাওয়া মানেই হচ্ছে শিক্ষা কেনা। শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনছে, পরীক্ষায় ভালো ফল কেনার চেষ্টা করছে। চিকিৎসা যেমন করে কিনতে হচ্ছে, শিক্ষাও সেভাবে আমাদের কিনতে হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আজকের পুঁজিবাদী বিশ্ব তা করেও। কিন্তু আমাদের এই নিষ্ঠুর, ভয়ঙ্কর পুঁজিবাদী রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালন করছে না। এখানে সব লোককে চিকিৎসার জন্য যেমন নিজের ওপর নির্ভর করতে হয়, তেমনি শিক্ষার জন্যও নিজের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর ফলে যারা পারছে তারা শিক্ষা ক্রয় করছে, যারা পারছে না তারা শিক্ষা নিতে পারছে না।

বর্তমানে দেশে চারটি পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে। অনেকেই পঞ্চম ও অষ্টম 

শ্রেণিতে বিদ্যমান পিইসি, জেএসসি পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ ধরনের পরীক্ষার আদৌ প্রয়োজন আছে কি?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :এ ধরনের পাবলিক পরীক্ষার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পরীক্ষা যত  কম হয়, তত ভালো। স্কুলের শেষে একটাই 

পাবলিক পরীক্ষা হতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের অমনস্ক করে তুলছে। সেই সঙ্গে কোচিং সেন্টারের গুরুত্ব আরও বাড়ছে। ছেলেমেয়েদের আরও বিপদে ফেলছে। 

এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের দেশের সব শিক্ষা সংস্কার পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত। ক্লাসরুমে পড়ানো হচ্ছে কিনা সেটার দিকে না তাকিয়ে পরীক্ষার নতুন ব্যবস্থা, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা দেখা, কত শতাংশ ছেলেমেয়ে পাস করল, সেটা নিয়ে প্রচারে সবাই ব্যস্ত থাকছে। পুরনো পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা না করে পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আরও গভীরভাবে ঢোকা হচ্ছে, যা খুবই ক্ষতিকর। অথচ ইংরেজি মাধ্যমে এত পাবলিক পরীক্ষা নেই। ওখানে সিলেবাসও পরিবর্তন হয় না। তারা ও-লেভেল, এ-লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছে। আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই।

নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যমান সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়েও অনেকের দ্বিমত রয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :এটা খুবই ধ্বংসাত্মক একটা পদ্ধতি। এই পদ্ধতি শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক কেউ বোঝেন না। যখন শিক্ষকরা কী প্রশ্ন করবেন বুঝতে পারেন না, তখন গাইড বইয়ে যে প্রশ্নগুলো আছে, ওখান থেকেই নিয়ে নেন। যারা এই সৃজনশীল পদ্ধতি করেছে, তারা একদিন অভিযুক্ত হবে, তাদের অভিযুক্ত হওয়াই উচিত। 

এই পদ্ধতির কারণে এখন ছাত্ররা গোটা বই পড়ে না। কী ধরনের প্রশ্ন হতে পারে, সেটা জানতে তারা কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন হয়। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিশ্বব্যাংকের টাকায় হয় বলে শুনেছি। উন্নয়নের নামে শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের নিরীক্ষা মারাত্মক ক্ষতিকর।

এ ছাড়া পাবলিক পরীক্ষার ফল নিয়ে একটা অভিযোগ আছে। সেটা হলো- ইচ্ছা করে জিপিএ হার কমানো হয়, ইচ্ছা করে বাড়ানো হয়। বেশি বেড়ে গেলে যখন কথা ওঠে, তখন কমানো হয়। আমার প্রশ্ন, এত দ্রুত শিক্ষার মান কীভাবে ওঠানামা করতে পারে? শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রের এমন হস্তক্ষেপ হওয়া উচিত নয়। শিক্ষা চলবে স্বাধীনভাবে। 

শিক্ষার মান বাড়াতে পরামর্শ কী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :উপযুক্ত শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন করা যাবে না। উপযুক্ত শিক্ষক নির্বাচনের আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, তার মেধা দরকার; দ্বিতীয়ত, এই পেশার প্রতি তার আগ্রহ থাকা দরকার। সেই সঙ্গে এমন একটা পরিবেশও দরকার, যেখানে তিনি পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারবেন।

আমাদের মতো জনবহুল দেশে শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এর মাধ্যমে আমরা দক্ষ মানুষ তৈরি করব। এই দক্ষ মানুষরা উন্নয়নের কাজে লাগবে। অর্থনীতির উন্নয়নটাও সেভাবে হবে। আমাদের সম্পদ সীমিত। কাজেই সেই সীমিত সম্পদের মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষিত করা আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব। 

মেধাবান শিক্ষকদের এই পেশায় আনতে হলে তাদের বেতন-ভাতা অন্য পেশা থেকে স্বতন্ত্র করতে হবে। সেটা করতে হলে রাষ্ট্রীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ থাকা উচিত শিক্ষাক্ষেত্রে। এটাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য প্রথমত, অনুৎপাদক খাতে ব্যয় কমিয়ে এই উৎপাদন খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে; দ্বিতীয়ত, শিক্ষকরা যাতে পড়ান সে জন্য জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নজরদারিত্ব বাড়াতে হবে। সরকারি নজরদারিত্ব মানেই নানারকম ফাঁকফোকর। তাই সামাজিকভাবে এই দায়িত্ব বাড়াতে হবে। অর্থাৎ অভিভাবকরাই দেখবেন ছেলেমেয়েদের ক্লাসরুমে ঠিকমতো পড়াশোনা হচ্ছে কিনা। কারণ ওটাই পড়াশোনার আসল জায়গা। 

শুধু পুঁথিগত পড়াশোনায় আবদ্ধ না রেখে ছেলেমেয়েদের সাংস্কৃতিকভাবেও প্রস্তুত করতে হবে। তাদের গান-বাজনা, নাটক, নানা ধরনের অনুশীলন, খেলাধুলা- এসব গ্রহণ করার ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের মানোন্নয়নে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি তো দীর্ঘদিনের। এ জন্য শিক্ষানীতিও করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কি অন্তরায় রয়েছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :এর দায় রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের চরিত্র যা সেটাই প্রতিফলিত হচ্ছে। রাষ্ট্র তো আসলে ধনীদের রাষ্ট্র। 

মেধাবীদের এই পেশায় আগ্রহী করতে আর কী করা যেতে পারে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :শিক্ষক নিয়োগের এখন যে ব্যবস্থা আছে, তাতে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে টাকা জোগাড় করতে হয়। সেই লোকই নিয়োগ পান, যিনি অন্য চাকরি পাচ্ছেন না, কিছু টাকা জোগাড় করতে পেরেছেন এমন। সুতরাং তার লক্ষ্যই থাকে টাকা দিয়ে শিক্ষকতায় ঢুকে প্রথমে নিজের বিনিয়োগকৃত টাকাটা তুলে নেওয়া। কোচিং সেন্টার খুলে, ছাত্রদের ওপর জুলুম করে তিনি টাকাটা তোলেন। টাকাভিত্তিক এই নিয়োগের পদ্ধতি দূর করতে হবে। এই পেশাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে মেধাবীরা এই কাজে আকর্ষণবোধ করে। একই সময়ে যে ছাত্র শিক্ষকতায় এসেছেন আর প্রশাসনে গেছেন, তার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। তাই শুধু তার বেতন-ভাতা বাড়ালেই হবে না, তাকে সমাজে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতে হবে, যদি আমরা শিক্ষাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে চাই। 

শিক্ষার স্তরগুলো কীভাবে সাজানো  যেতে পারে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :একটা পর্যায় পর্যন্ত সবার জন্য সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থাকবে। প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক পর্যন্ত সার্বজনীন শিক্ষা তৈরি করা প্রয়োজন।

এসএসসি পরীক্ষার পর একজন শিক্ষার্থী কারিগরি, সাধারণ না বিজ্ঞানে পড়বে, সেটা সে ঠিক করবে। এ ছাড়া বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে হবে। কারণ বিজ্ঞান ছাড়া কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়। 

শিক্ষাকে জাতীয়করণ করাটা কতটা জরুরি বলে মনে করেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :অবশ্যই জরুরি। কিন্তু আগে রাষ্ট্রের চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ধনীরা, যারা রাষ্ট্র শাসন করে, তারা সেটা দখল করে নিল। সব কারখানা, সব জমি উজাড় করে দিল। ফলে আদমজীর মতো একটা মিল বন্ধ হয়ে গেল। কাজেই জাতীয়করণ দিয়েও সমস্যার সমাধান হবে না। রাষ্ট্রের যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, সেটা বদল করতে হবে। আমাদের স্বপ্ন ছিল সমাজ বিপল্গবের। সেটা সফল না হলে জাতীয়করণ করেও সমস্যার সমাধান হবে না। 

আপনাকে ধন্যবাদ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :আপনাকেও ধন্যবাদ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0083878040313721