রাজধানীতে রমরমা কোচিং বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের রিটার্ন খতিয়ে দেখার উদ্যোগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর কোচিং সেন্টারগুলোর শিক্ষকদের অনেকে মাসে লাখ টাকার বেশি আয় করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের অনেকে সঠিকভাবে রাজস্ব পরিশোধ করছেন না। এ অবস্থায় কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ফারজানা লাবনী। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন  বলেন, চলতি করবর্ষে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সঠিক হিসাবে রিটার্ন জমা দিচ্ছে কি না তা নজরদারি করা হবে। প্রতিবছর গড়ে ২২ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দেন।

আশা করা হচ্ছে, এবার প্রায় ১২ লাখ করদাতা এই হিসাবে যোগ হবেন। নতুন করদাতাদের মধ্যে পেশাজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ অনেকেই আছেন। আশা করব সবাই নিজ উদ্যোগে রিটার্ন জমা দেবেন। অন্যথায় এনবিআর তাঁদের খুঁজে বের করে জবাবদিহির আওতায় আনবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষকদের অনেকে স্কুল-কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং করিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ পান। অথচ তা রিটার্নে উল্লেখ করেন না। এবার এ বিষয়ে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে।’

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর নামিদামি স্কুলের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুল বা কলেজে চাকরির বাইরে কোচিং করান। অনেকে পৃথক বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এই কোচিং ব্যবসা চালান। অনেকে আবার কোনো স্কুল-কলেজে চাকরি না করে শুধুই কোচিং করিয়ে থাকেন।

ব্যাচভিত্তিক প্রাইভেট, একাডেমিক কোচিং, মডেল টেস্টসহ বিভিন্ন কায়দায় কোচিং চলছে। স্কুলের শিক্ষকরা ব্যাচভিত্তিক সপ্তাহে তিন দিন পড়ালেও শিক্ষার্থীপ্রতি নেওয়া হচ্ছে মাসে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর নামি স্কুলের শিক্ষকরা বাসায় গিয়ে সপ্তাহে তিন দিন পড়ালে নিচ্ছেন ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখার আশপাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশত কোচিং সেন্টার। এসবের বেশির ভাগের সঙ্গেই বেনামে যুক্ত রয়েছেন এই স্কুলের শিক্ষকরা। মনিপুর স্কুলের বালিকা শাখার সামনে রয়েছে আধুনিক কোচিং সেন্টার, ইনটেনসিভ কোচিং সেন্টার ও গ্রিন কোচিং সেন্টার।

মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষক শাহজাহানপুর ও খিলগাঁওয়ে কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন। বাসাবো খেলার মাঠের আশপাশ ও মধ্য বাসাবোতে প্রাইভেট আর কোচিং করান মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা। একেকজন শিক্ষক এক শ থেকে দুই-তিন শ পর্যন্ত শিক্ষার্থী পড়ান।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের এক অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে স্কুলেরই তিনজন শিক্ষকের কাছে ব্যাচে পড়ে। প্রতি শিক্ষককে মাসে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। সপ্তাহে তিন দিন করে পড়ান শিক্ষকরা। প্রতি ব্যাচে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকে। এ ছাড়া মনিপুর স্কুলের শিক্ষকদের কাছে ব্যাচে পড়লে মাসে ২০০০ টাকা, ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ব্যাচে পড়লে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়।

ইংরেজি মাধ্যমের অধিকাংশ কোচিং সেন্টার রয়েছে ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, গুলশান, উত্তরা, বারিধারা, বনানী, সেগুনবাগিচাসহ রাজধানীর অভিজাত  এলাকাগুলোতে। কেউ এককভাবে, কেউবা ভবন ভাড়া করে ব্যাচে পড়াচ্ছেন। কোনো কোনো কাচিংয়ে একসঙ্গে ৪০ থেকে ৮০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা সারা দিনে চার-পাঁচটি ব্যাচ পড়িয়ে থাকেন।

আর একেকজন শিক্ষার্থী থেকে নেওয়া হয় আড়াই-তিন হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে এর বেশিও নেওয়া হয়। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল বা বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার জন্যও কোচিং করানো হয়। এসব কোচিংয়ে ভর্তির নামে শিক্ষার্থীপ্রতি এককালীন ৮-১০ হাজার টাকার পাশাপাশি মাসে নেওয়া হয় আড়াই-তিন হাজার টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নামকরা কোচিং সেন্টারগুলোতে একেকজন শিক্ষক মাসে চার-পাঁচ লাখ আয় করে থাকেন। অথচ তাঁদের অনেকে নামমাত্র রাজস্বও দেন না। এসব কোচিং সেন্টার থেকে হিসাব মতো রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, কোচিং সেন্টারসহ অপ্রচলিত অনেক খাত থেকেই রাজস্ব আদায়ের সুযোগ রয়েছে। এনবিআর এসব খাতে নজর দিলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003511905670166