সব শর্ত পূরণ করেও সরকারি হলো না জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজ

দিনাজপুর প্রতিনিধি |

সকরারি হওয়ার মতো সব ধরনের যোগ্যতাই ছিল দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজের। সব শর্ত পূরণ করে সরকারিকরণের তালিকায়ও ছিল কলেজটি। প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছিলেন। তার পরও তালিকাভুক্ত এ কলেজটিকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্মত কাহারোল ডিগ্রি কলেজকে সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয়। 

সূত্র জানা যায়, ১৯৯২ সালে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর এইচএসসি এবং ২০০৪ সালে ডিগ্রি শাখা এমপিওভুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে প্রতিটি উপজেলায় একটি কলেজকে সরকারি করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী যথাযথ বিধান মেনে ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর আবেদন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সাংসদ কলেজটিকে সরকারিকরণের ডিও লেটার দিলে একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর সরকারিকরণের তালিকায় ৩২ নম্বরে কলেজটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে সরকারিকরণে প্রধনমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ায় ১২১ নম্বর সিরিয়ালে রাখা হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন সরকারীকরণের চূড়ান্ত ধাপে উন্নীত করার চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর দুই মাস পর জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজকে বাদ দিয়ে একই উপজেলার কাহারোল কলেজকে সরকারীকরণের তালিকায় রেখে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজকে সরকারি করার আদেশ দিলে রায়ের বিরুদ্ধে একই দিন কাহারোল ডিগ্রি কলেজ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে। 

এরই মধ্যে গত ২ আগস্ট ২৭১টি কলেজকে সরকারিকরণে বাধা নেই এবং ২১টি কলেজের বিষয়ে মামলা চলমান থাকায় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপপত্র দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই ২১টি কলেজের মধ্যে জয়নন্দ ও কাহারোল ডিগ্রি কলেজ থাকলেও এবং মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও গত ২৭ আগস্ট কাহারোল ডিগ্রি কলেজকে সরকারীকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, কাহারোল কলেজের সম্পত্তি নিয়েও মামলা চলছে। তাছাড়া ২০০৮ সালে চালু হওয়া ওই কলেজের ডিগ্রি শাখাও এমপিওভুক্ত নয়। 

স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম কুমার রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার মানুষ জেনে এসেছে জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজ সরকারি হবে, অথচ হয়েছে কাহারোল ডিগ্রি কলেজ। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো অদৃশ্য হাত আছে। 

জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহন চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, শর্ত পূরণে ত্রুটি থাকলেও অর্থের বিনিময়ে কাহারোল ডিগ্রি কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। আমরা এখন আদালতের নির্দেশের দিকে চেয়ে আছি।

জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজের পক্ষে মামলাটি লড়ছেন অ্যাডভোকেট লাইফুজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় গত ২ আগস্ট সারসংক্ষেপে মামলা নিষ্পত্তির পর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছে। অথচ মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এ অবস্থায় প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্ববিরোধী কার্যকলাপ। তাদের এমনটা করা উচিত হয়নি।

এ ব্যাপারে কাহারোল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হাসান বলেন, আইন মেনেই কলেজ সরকারিকরণে হয়েছে। একটি অর্থও কাউকে দেওয়া হয়নি। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কন্দর্প নারায়ণ রায় বলেন, আমি অল্প দিন হয়েছে এসেছি। জরিপ অনেক আগে হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে নির্দেশনা দিলে পুনরায় জরিপ করে পাঠানো হবে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034248828887939