সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি

রুম্মান তূর্য ও ফারহানা বহ্নি |

৩০ এপ্রিলের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে বর্ধিত ৪ শতাংশ চাঁদার আদেশ বাতিল না হলে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। এছাড়া রাজধানীর পলাশীতে ব্যানবেইস ভবনে অবস্থিত অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের অফিস ঘেরাও করারও হুমকি দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. কাওছার আলী শেখ আজ সোমবার (২২ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।  

 

তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের লক্ষ্যে আসন্ন ইদের আগেই সরকারি শিক্ষকদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও বাড়ি ভাড়া প্রদান।  

তবে, দাবি আদায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো কঠোর কর্মসূচির আগে ৩০ এপ্রিল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন শিক্ষকরা। একইদিনে সারাদেশের জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, শিক্ষক নেতাদের সাথে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই চাঁদার হার বৃদ্ধি করা হয়। এতে শিক্ষকরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, এর আগেও কয়েকবার চাঁদা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়েছে এবং প্রজ্ঞাপন জারি করেও তা স্থগিত করা হয়।

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের শত শত কোটি টাকা সিড মানি কোন ব্যাংকে কী সুদে থাকে তা জানার অধিকার সব শিক্ষকের থাকলেও তা জানা যায় না কোনো দিনই। অবসর ও কল্যাণে গত ১৬ বছরে কোনো অনুসন্ধান, তদন্ত বা অডিট হয়নি। শিক্ষকদের জমা করা চাঁদার শত শত কোটি টাকা ও সরকারের দেয়া সিড মানি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে তুলে বিতর্কিত বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হয় কেন? বেসরকারি ব্যাংক থেকে পাওয়া অতিরিক্ত সুদের টাকা কাদের পকেটে যায়? অবসর ও কল্যাণের সব ব্যাংক হিসেব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অডিট করানোর দাবি জানান শিক্ষকরা। 

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পেনশন পান না। অবসরে গেলে এককালীন কয়েক লাখ টাকা পান অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে। এছাড়াও কিছু টাকা পান কল্যাণ ফান্ড থেকে। এই দুটি সুবিধা পেতে এমপিওভুক্ত পদে চাকরির পুরো সময়ের প্রতিমাসে মোট ৬ শতাংশ হারে টাকা বেতন-ভাতার সরকারি অংশ থেকে অবসর  ও কল্যাণ ফান্ডের জন্য চাঁদা বাবদ কেটে রাখা হয়। একজন শিক্ষক চাকরিজীবনে যত টাকা চাঁদা হিসেবে দেন অবসরে গেলে তার প্রায় ১৪ গুণ বেশি টাকা পান।   

আরও পড়ুন: চাঁদা বৃদ্ধির পরও ২১৬ কোটি টাকা বার্ষিক ঘাটতি: শরীফ সাদী

                     কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা: কোন শিক্ষক নেতা কত মেরেছেন

জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক আদেশে অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের চাঁদার হার যথাক্রমে ৬ ও ৪ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে ছিল মোট ৬ শতাংশ যা বেড়ে ১০ শতাংশ হলো। চলতি এপ্রিল মাস থেকে এই বর্ধিত চাঁদা দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকরা তা দিতে চান না। তাদের যুক্তি বেশি চাঁদার জন্য বাড়তি কোনো সুবিধা পাবেন না তারা। অপরদিকে, সরকারের যুক্তি চাঁদার হার বেশি দেয়া হলে অবসরে যাওয়া মাত্রই টাকা পাওয়া যাবে। ফান্ড সংকট থাকা অবসরে যাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় অবসর সুবিধার টাকার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিটিএ উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা, সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সহসভাপতি আলী আজগার হাওলাদার, বেগম নুরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মোহাম্মদ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মোস্তফা জামান খান, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নীহার কান্তি বাছাড়, দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, গ্রন্থাগার সম্পাদক অশোক কান্তি গুহ, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাহমিদা রহমান, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহানা বেগম। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029067993164062