অবিশ্বাস্য হলেও সত্য গভর্নিং বডিকে না জানিয়ে ভিকারুননিসা স্কুলে যাওয়াকে ‘অন্যায়’ জ্ঞান করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের তীব্র সমালোচনায় লিপ্ত প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিংবডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। অরিত্রী আত্মহননের ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের কমিটির কাছেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন গোলাম আশরাফ তালুকদার। ৪ ডিসেম্বর রাতে তৈরি করে ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া তদন্ত চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার দাম্ভিকতার সাথে অভিযোগ করেন যে, শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় তাদেরকে [গভর্নিং বডি] না জানিয়ে কেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন। সভাপতির এহেন আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সাধারণ অভিভাবকদের তারা মানুষই বলেই গ্রাহ্য করেন না। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজমান আছে বলেই অরিত্রী ট্রাজেডি সংঘটিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গভর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়া প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’
৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আত্মহত্যার ঘটনাটি তদন্ত করে ওইদিনই প্রতিবেদন তৈরি করেন তিন সদস্যের কমিটি। কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ। অপর দুই সদস্য হলেন, ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস ও ঢাকার জেলা শিক্ষা অফিসার মো: বেনজীর আহমদ।
তদন্ত কমিটি গোলাম আশরাফ তালুকদার, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদৌস, শিফট ইনচার্জ জিনাত আখতার, পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী কক্ষ পরিদর্শক লুৎফুন নাহার করিম ও আফসানা আমাতু রাব্বি, গভর্নিং বডির সদস্য ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অভিভাবক রিপন তরফদারের বক্তব্য গ্রহণ করেন। পরীক্ষার হলে যে কক্ষে অরিত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল সেই কক্ষের অন্যান্য সহপাঠীদেরও বক্তব্য নেয়া হয়। এছাড়া শান্তিনগরের বাসায় গিয়ে অরিত্রীর বাবা দিলীপ কুমার অধিকারিও সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। ২ ডিসেম্বর ভিকারুননিসার নিউ বেইলি রোডের মূল শাখার ১২৮ নং কক্ষে দুপুরে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় বসে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী। ৩ ডিসেম্বর অরিত্রী বাবা ও অসুস্থ মাকে স্কুলে তলব করা হয়। ওইদিনই বিকেলে আত্মহত্যা করে অরিত্রী।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন রোববার রাতে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের যে কোনও জায়গায় যে কোনও সময় যেতে পারেন। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেকোনও সময় যেতে পারেন। গভর্নিং বডি বা অধ্যক্ষকে জানিয়ে যেতে হবে না। মন্ত্রীর ভিকারুননিসায় যাওয়া নিয়ে সভাপতির মন্তব্য হাস্যকর।’
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে তাৎক্ষণিকভাবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অধ্যক্ষ, উপস্থিত শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন। তিনি শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী কলেজ প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি মেধাবী ছাত্রী অরিত্রীর অনাকাঙ্খিত মৃত্যুকে বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
মন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয়… যে ঘটনাগুলো আমরা শুনেছি, এর পেছনের কথা শুনছি। ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।