সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাবনা কতটুকু?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অনেকেই ভালো ফলাফল প্রাপ্তিতে আনন্দে ভেসেছে আবার কেউ কেউ আশানুরূপ ফল না পেয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। তবে এই হাসি-কান্নার উত্সবের মধ্যেও সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা।

যে হারে ভালো রেজাল্ট হচ্ছে এবং আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসনসংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় চিন্তাটা তাই ইচ্ছে করলেও সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের যেমন চিন্তার শেষ নেই, তেমনি তাদের থেকেও বেশি চিন্তিত পরিবারগুলোু। কোনো কোনো পরিবার তাদের পারিবারিক মানসম্মানের কথা চিন্তা করছে, যেন বড়ো মুখে বলা যায়—আমার সন্তান অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন জাজাফী।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিগত বছরগুলোতেও অনেক কথা উঠেছে। লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কথা বলে আসছেন। তিনি তাঁর লেখনীতে দেখিয়েছেন ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমাদের ছাত্রছাত্রীদের কী পরিমাণ হয়রানির শিকার হতে হয়। সেটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এই শিক্ষাবিদসহ আরো অনেকেই দীর্ঘদিন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছেন কিন্তু আজও পর্যন্ত সেরকম কোনো পরীক্ষা আমরা দেখতে পাইনি।

আরো একটি ভর্তি পরীক্ষা যখন আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে তখন এই প্রশ্নটাই আবার ঘুরে-ফিরে আমাদের সামনে চলে আসছে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার প্রশ্নটা ভিন্ন কারণে আসছে। ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের যে পরিমাণ কষ্ট করতে হয় সেটা উপলব্ধি করে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এক বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন যেন সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা চালু করা হয়। আমরা পত্রিকার মাধ্যমে যতটা জেনেছিলাম তা হলো মহামান্য রাষ্ট্রপতির এই আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।

কিন্তু সেই আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। যখন আবার একটি ভর্তি পরীক্ষার সময় এসেছে তখন এই প্রশ্নটি ঘুরেফিরে ভিড় করছে। এবার কি তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে? নাকি পরীক্ষা পদ্ধতি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে।

কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন পাওয়ার আশায় একই শিক্ষার্থীকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট যেতে হয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে। এই যাওয়া-আসা এবং সেখানে থাকা-খাওয়া বাবদ যে অর্থ ব্যয় হয় তা অধিকাংশ পরিবারের জন্যই জোগান দেওয়া কঠিন। পরিবার যখন অনেক পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে টাকা জোগাড় করে দেয় এবং আশা করে কোথাও না কোথাও সুযোগ হবে এবং যখন সত্যি-সত্যিই সেই আশা ভঙ্গ হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা ভেঙে পড়ে এবং সব দোষ পড়ে শিক্ষার্থীর ঘাড়ে, যদিও এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর করণীয় কিছু থাকে না।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে অন্তত অর্থ এবং শ্রম এ দুটোকে সাশ্রয় করা যেত—এটা নির্দ্বিধায় বলা চলে। একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে যদি সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পন্ন করা যেত, তাহলে ছাত্রছাত্রীকে মাত্র এক দিন পরীক্ষা দিতে যেতে হতো, তাতে বারবার দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার ধকল থেকে তারা রেহাই পেত, পাশাপাশি অর্থও বেঁচে যেত। বিষয়টি খুবই মানবিক। তাই একক সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে উপাচার্যগণের প্রতি আমরা আশা করতেই পারি যে এবার অন্তত আগের বছরগুলোর মতো হবে না।

অভিভাবকেরাও সেক্ষেত্রে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারবেন। শুধু যে সময় ও অর্থ বাঁচবে তা-ই নয়, পাশাপাশি মেয়ে শিক্ষার্থীদের এবং তাদের পরিবার অনেক ভোগান্তি থেকে বেঁচে যাবে। ছেলেরা নিজেদের মতো ঢাকা খুলনা রাজশাহী গিয়ে পরীক্ষা দিলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারের কাউকে না কাউকে সঙ্গে যেতে হয়, সেক্ষেত্রে খরচও দ্বিগুণ হয়। অন্যদিকে পরিবারের যিনি সঙ্গী হন তারও অফিস বা কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে। সমন্বিত পরীক্ষা হলে এ দিকটিও সুবিধাজনক হবে বলে মনে করি।

আমরা বারবার বলে আসছি, বিগত দিনে দেশের সব মেডিক্যাল কলেজে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা কেন পারবে না? এমনকি এটাও করা যেতে পারে যে একক ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশ নেবে। প্রশ্নপত্র সারাদেশে একই হবে এবং একই সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

একটু সদিচ্ছাই আমাদের অগণিত শিক্ষার্থীর অনেক কষ্ট লাঘব করতে পারে। এতদিন শিক্ষাবিদেরা দাবি জানানোর পরও যেটা সম্ভব হয়নি কিংবা কেউ আমলে নেয়নি, এবার সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানের পর ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি। এর পরও যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আচার্য এবং দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানকে আমলে না নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বদলে আগের নিয়মে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে, তাহলে সেটা হবে চরম ন্যক্কারজনক। আমাদের অগণিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা বিবেচনা করে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানকে মূল্যায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করুক—এটাই আমাদের দাবি।

লেখক :শিক্ষার্থী, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0085139274597168