শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিসমন্বয় নেই শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনটিআরসিএর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে খুলনা শহরের দাদা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান আবু দাউদ খান। ১১ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন ওই বিদ্যালয়ে। গত ছয় মাস ধরে পড়িয়ে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। কারণ এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না তিনি। এমপিওভুক্তির জন্য ফেব্রুয়ারিতেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করেন তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ে। আঞ্চলিক উপপরিচালক নিভা রানী পাঠক তাকে জানিয়ে দেন, তিনি এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না কখনও। কারণ, প্রচলিত জনবল কাঠামোতে (বিদ্যালয়) জুনিয়র শিক্ষকের পদ নেই। শুনে আকাশ মাথায় ভেঙে পড়ে তার। শনিবার (২০ জুলাই) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাব্বির নেওয়াজ।

আবু দাউদ খানের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে আইনানুগভাবে নিয়োগ পেয়েও এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না সারাদেশের চার শতাধিক শিক্ষক। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের জুনিয়র (সাধারণ) শিক্ষক তারা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান 'বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ' (এনটিআরসিএ) গত ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ দেয় তাদের। সেই থেকে গত ছয় মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। কারণ তাদের সরকারি বেতন (এমপিও) চালু হয়নি। এই শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি করার সরকারি প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের নয়টি আঞ্চলিক অফিসে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান। বাধ্য হয়ে অনেকে ছুটে আসছেন ঢাকায় মাউশির প্রধান কার্যালয় শিক্ষা ভবনে। তবু তাদের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ছে না। মাউশির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো-২০১৮ এর আলোকে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা হয়। এই শিক্ষকদের পদ সেখানে নেই। সঙ্গত কারণে তারা এমপিওভুক্ত করতে পারছেন না। অপরদিকে, ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বক্তব্য, তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমেই নিয়োগ পেয়েছেন। তাহলে তাদের কেন এমপিওভুক্ত করা হবে না?

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাউশির সমন্বয় হচ্ছে না। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে নিরীহ শিক্ষক-কর্মচারীদের। এর আগেও জনবল কাঠামোর বাইরে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সরকারি এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা একটি প্রতিষ্ঠানের এবং বেতন দেওয়ার ক্ষমতা আরেক প্রতিষ্ঠানের, সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণেই এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগ ও বেতন দেওয়ার ক্ষমতা যে কোনো একটি কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকা সমীচীন।'

মাউশি সূত্র জানায়, জুনিয়র শিক্ষক (সাধারণ) নিয়োগ দেওয়ার আগে এনটিআরসিএ মাউশির সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এখন নিয়োগ দেওয়ার পর ওই শিক্ষকরা এসে তাদের কাছে এমপিওভুক্তি দাবি করছেন। এতে তারা বিব্রতও হচ্ছেন। 

বাগেরহাটের শিক্ষক মনজুর শেখ বলেন, 'কার পাপে যে এ চাকরিতে এসেছিলাম, তা জানি না। বেতনের চাকরি ছেড়ে এসে এখন বিনা বেতনের চাকরিতে বেগার খাটছি।' 

এই শিক্ষকদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, 'সত্যিকারভাবেই এই শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের নিয়োগের আগে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ মাউশির সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। করলে তারা আগেভাগেই বলতে পারতেন, এই পদ জনবল কাঠামোতে নেই, শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না।' এখন এই শিক্ষকদের কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের পক্ষ থেকে এনটিআরসিএর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দেখব কী করা যায়।' 

এ বিষয়ে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এস এম আশফাক হুসেন বলেন, 'মাউশির সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে না, এটা ঠিক নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা আমাদের দেওয়ার পর আমরা তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাই। তারা মাউশিরই কর্মকর্তা। তারা যা যাচাই-বাছাই করে আমাদের তালিকা চূড়ান্ত করে দেন। এরপর পরীক্ষা নিয়ে আমরা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিই। জনবল কাঠামোতে যদি পদ না থাকে, তবে কীভাবে মাঠ পর্যায়ের এই শিক্ষা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিলেন?' 

তিনি বলেন, 'ভুলটা যারই হোক না কেন, এই শিক্ষকদের বিষয়ে এখন সমাধান দেবে মাউশি। যদি তারা না দিতে পারে, তবে আমাদের বলবে। আমরা সমাধান দেব।' 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এনটিআরসিএ এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও, দুই পদেই নিয়োগ দিতে পারে।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059089660644531