সরকারি কলেজের শিক্ষকরা চাকরি নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?

মাছুম বিল্লাহ |

পত্রিকা মারফত জেনেছি, সারা দেশে বর্তমানে কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসাসহ ৩৩০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, নতুনভাবে ঘোষণা করা আরো ২৮৩টি এর সঙ্গে যোগ হবে। পুরনো সরকারি কলেজ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোয় ১৬ হাজার ৫৫৪টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৫০৭টি, সহযোগী অধ্যাপক ২ হাজার ২২১টি, সহকারী অধ্যাপক ৪ হাজার ২৮৪টি এবং প্রভাষক পদে ৮ হাজার ২৬টি পদ রয়েছে। আরো জানা যায়, দেশের ২১৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশি। প্রায় চার হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে।  প্রায় দুই হাজার প্রভাষকের পদ খালি। সরকারি কলেজে নিয়োগের জন্য পিএসসির মাধ্যমে যে সংখ্যক শিক্ষকের জন্য সুপারিশ করা হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে সৃষ্ট পদ থাকলেও শূন্য আসনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া নিয়মিতভাবেই অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। শিক্ষার প্রতি অবহেলার প্রমাণ এখান থেকেই মেলে।

সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এ মোতাবেক ৩৬তম বিসিএস থেকে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ করা গেজেটভুক্ত ৯৩৭ শিক্ষক ৩  সেপ্টেম্বর বিভিন্ন কলেজে যোগদান করেছেন। ৩৭তম বিসিএস থেকে ২২৪ ও ৩৮তম থেকে ৯৯২ জন শিক্ষক নিয়োগের জন পিএসসিতে চাহিদা দেয়া হয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, সরকরি কলেজ উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হলেও সেখানে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। সাধারণ বিসিএসের মাধ্যমে যে সংখ্যক শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ আসে, তাদের নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব হয় না। এখনো অনেক কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, পার্শ্ববর্তী কলেজের শিক্ষক এনে ক্লাস করাতে হয়। এক্ষেত্রে  বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে এ সংকট নিরসন করা সম্ভব হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নাকি নিয়েছে। এজন্য পিএসসির চেয়ারম্যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন, যদিও তাদের কাছে চাহিদাপত্র এখনো পৌঁছায়নি। জানা যায়, দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রম পরিচালিত হতে যাচ্ছে।  কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা উচ্চ শিক্ষিত  চাকরিপ্রার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কবে একটি সুবিধাজনক চাকরি পাওয়া যাবে। ক্যাডার সার্ভিস হলে তো কথাই নেই। তবে বর্তমানে প্রচলিত ২৮টি ক্যাডারের মধ্যে পররাষ্ট্রের পরই হয় প্রশাসন না হয় পুলিশ ক্যাডারের দিকে সবার ঝোঁক থাকে বেশি। কারণ প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে রয়েছে দাপট, ক্ষমতা, প্রমোশন, সামাজিক মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা  ইত্যাদি।

এ ২৮টি ক্যাডারের মধ্যে বৃহত্তম ক্যাডার হচ্ছে শিক্ষা ক্যাডার। আবার দুর্বল ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিতও এ ক্যাডার। কিন্তু কেন? বিসিএসের শিক্ষা ব্যতীত বাকি ২৭টি ক্যাডারে প্রমোশন হয় ব্যাচভিত্তিক, আর শিক্ষা ক্যাডারে প্রমোশন দেয়া হয় বিষয়ভিত্তিক। ফলে জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে হয়  সিনিয়রদের। দেখতে পাচ্ছি, অনেক বন্ধু ইংরেজিতে সহকারী  কিংবা সহযোগী অধ্যাপক। আর বাংলার বন্ধুদের দেখছি পুরো অধ্যাপক। কারণ জিজ্ঞাসা করলে ওই একই উত্তর—  ইংরেজির চেয়ে বাংলা বা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা তাড়াতাড়ি প্রমোশন পেয়েছেন। এটির সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে এত দিনে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। শিক্ষকদের সংগঠন আছে, অথচ এ বিষয়টির সুরাহা  হয়নি এখনো।

এখন অবশ্য অনেকেই অধ্যাপক হয়েছেন এবং হচ্ছেন। সরকারের মেয়াদের শেষের দিকে প্রশাসনসহ সব ক্যাডারেই হু হু করে প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের প্রমোশনে যদিও আসল তৃপ্তি নেই তার পরও অর্থলাভ তো হচ্ছে। তৃপ্তি বলতে একটি উদাহরণ দিয়ে  বুঝাচ্ছি। কোনো শিক্ষার্থী যদি বুয়েটের কোনো   এক ফ্যাকাল্টিতে পড়ে, যে কেউই তাকে   মেধাবী ছাত্র হিসেবেই ধরে নেয়। বুয়েটে যে ছাত্রটি পড়ছে, তার মানের বিষয়ে দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজে যদি কেউ পড়ে সে যত ভালো বা সৃজনশীল শিক্ষার্থীই  হোক না কেন, সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় শিক্ষার্থীটি তত মেধাবী নয়, তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। সে যখন মাস্টার্স পাস করে কোথাও চাকরি নেয়ার জন্য যাবে, তখন তাকে বিভিন্নভাবে পরখ করে দেখা হয়। কারণ তার কোয়ালিটিতে চাকরিদাতারা বিশ্বাস রাখতে পারছেন না।

শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যদি আসি, তাহলে দেখা যাবে, বেশ ক’বছর আগেও যদি বলা হতো— তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তখন কোনো চিন্তা না করেই কেউ বুঝতে পারত— তিনি সমাজের একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। চোখের সামনে ভেসে উঠত  তাঁর বাসায় বিশাল বইয়ের লাইব্রেরি, লাইব্রেরি ভর্তি বিভিন্ন ধরনের বই, দেশী-বিদেশী জার্নাল। দেশী-বিদেশী রেভার্ড জার্নালে তাঁর লেখা প্রকাশিত  হয়েছে, তিনি শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি শ্রেণীকক্ষে ঢুকলে তার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান প্রবেশ করে। তার সান্নিধ্যে আসা মানে জ্ঞানের পরিধি বেড়ে যাওয়া। তার কথাবার্তা, চালচলন, আচার-আচরণ, পড়ানো সব কিছুই আলাদা। তার নিজেরই একটি জগৎ আছে। কাজেই ওই পদে যিনি উন্নীত হন, তার একটি আলাদা মর্যাদা ছিল। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অধ্যাপক হচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় তিনি গোলাপি দল করেন কিংবা নীল দল করেন। কারোর চোখের সামনে বা মানসচক্ষে উপরের দৃশ্যাবলি আর ভেসে ওঠে না। আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মানে সমাজের বিরল চরিত্রের এবং  বৈশিষ্ট্যের কিছু মানুষকে  বোঝানো হতো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শোনার সঙ্গে সঙ্গে একটি কথা ও একটি চিত্রমানস চক্ষে ভেসে ওঠে— তিনি কোন পার্টির লোক। তার বক্তব্য কেমন হবে, বক্তব্যে কী কী বলবেন— মোটামুটি সবাই জানেন। এর জন্য শুধু ভিসিরা, বা অধ্যাপকরা বা শিক্ষার্থীরাই যে দায়ী তা নয়। পুরো ব্যবস্থাই যেন এমনটি হয়েছে। এজন্য পুরো শিক্ষিত সমাজকে গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে এবং হারানো ঐতিহ্য  ফিরিয়ে আনতে হবে।

কলেজের কথায় যদি আসি, তাহলে দেখা যায় কলেজে   অধ্যাপক হচ্ছেন। তাতে খুশি সবাই কিন্তু অধ্যাপক হওয়ার যে প্রকৃত আনন্দ, সে  আনন্দ কি তারা পাচ্ছেন? কোন জার্নালে প্রকাশনা নেই, বাসায় লাইব্রেরি তো দূরের কথা, অনেক অধ্যাপক আছেন যারা পত্রিকাও পড়েন না। নিজ বিষয়ের এক-দুটি দেশী বই ছাড়া অন্য বিষয় বা বিদেশী লেখকদের কোনো বইও নেই তাঁর বাসায় কিংবা অফিসে। বাসায় পড়ার আলাদা কোনো টেবিলও নেই, লাইব্রেরি তো দূরের কথা। এতে যে উদাহরণ সৃষ্টি হলো তা হচ্ছে, নিজ চেয়ারে বসে থাকতে হবে, সময় পার করতে হবে, সময় পার হলেই অধ্যাপক। না হয় রাজনীতি করতে হবে, ধরাধরি করতে হবে। তাহলে অধ্যাপক হওয়ার আর কোনো ক্রাইটেরিয়া কাজ করল না। এ ধরনের অধ্যাপক হওয়ায় কতটা আনন্দ পাওয়া যায়, তা আমার অধ্যাপক বন্ধুরাই বলতে পারবেন। একবার এনসিটিবিতে এক সভায় দেখলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব অধ্যাপকদের উদ্দেশে বলছেন, ‘আপনারা অধ্যাপক হয়েছেন, জীবনে নিজ থেকে একটি রচনাও লিখেছেন কেউ? কেউ একটি পৃষ্ঠাও লিখেছেন? অথচ সবাই অধ্যাপক হয়েছেন।’ কথা যেহেতু সত্য, দেখলাম কোনো অধ্যাপক কোনো উত্তর দিচ্ছেন না, শুধু তাঁর মুখের তাকিয়ে আছেন।

সরকারি কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষা-বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করা বা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা বিষয় থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে যারা চতুর, তারা লিয়াজোঁ মেইনটেন করে কিংবা   ধরাধরি করে  শিক্ষা বোর্ডে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে, মাউশিতে, নায়েমের প্রশাসনিক পদগুলোয় চলে আসেন। আর একবার যদি কেউ এসব পদে আসেন, তাকে আর সরানো যায় না।  তারা আর শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চান না। আমরা এমনো দেখেছি, শিক্ষাবোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়ে স্থায়ীভাবে বসে গেছেন, কলেজের শিক্ষকতায় আর ফেরত যাননি। এর অর্থ অনেক। শিক্ষকতা ভালো লাগে না কিংবা শিক্ষকতায় কোনো মানমর্যাদা নেই, নিয়মকানুনের বালাই নেই। এ উদাহরণ অনেকের জন্য নেতিবাচক। আগত দিনের শিক্ষকদের জন্য এ উদাহরণ এ ধরনের বার্তা দেয়— শিক্ষকতায় এসো না, শিক্ষকতা ভালো নয়।   প্রেষণে এসব পোস্টে কাজ করার পর নির্দিষ্ট সময়ান্তে নিজ পদে শিক্ষকতায় ফিরে যাওয়া উচিত। শিক্ষা ক্যাডারে মোট পদ ১৭ হাজার, তাদের মধ্যে ১৪ হাজার কর্মকর্তা সরকারি কলেজগুলো এবং বোর্ড, অধিদপ্তরে ও  নায়েমে, বিভিন্ন প্রজেক্টে কর্মরত। তার অর্থ হচ্ছে, তিন হাজার পদ খালি। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোয় যারা চাকরি করছেন, তারা দেখা যায় পদ দখল করেই থাকেন।

বিভিন্নভাবে তদবির করে শিক্ষকতায় আর ফিরতে চান না। অফিশিয়াল ও প্রশাসনিক পদেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এটি একটি সিরিয়াস বিষয়। তারা শিক্ষকতায় ফিরতে চান না, অর্থাৎ সেখানে আনন্দ নেই, ক্ষমতা (!) নেই, দাপট নেই; যা মাউশিতে বসে করা যায়। থাকবেই বা কীভাবে? কলেজে চাকরি করে অনেকের পক্ষেই সারা জীবনে একবার বিদেশ সফর করা সম্ভব হয় না অথচ প্রশাসনিক পদে, মাউশিতে, বোর্ডে, নায়েমে যোগদান করার পরপরই দেখা যায়, একটির পর একটি বিদেশ সফর করেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। শিক্ষকদের জন্য নয় কেন? শিক্ষকদের জন্যও নিয়মানুযায়ী এ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটি না হলে সবাই তো সেই প্রশাসনিক পদ দখলের জন্য লিয়াজোঁ করার ধান্ধায় থাকবেন, পড়াবেন কখন আর নিজে পড়বেন কখন? আসলে  শিক্ষা যে আনন্দময়, তা সরকারি কলেজের শিক্ষকরাই যদি করতে না পারেন, তাহলে বাকিদের কী হবে! এখানে অবশ্য শুধু শিক্ষকরাই দায়ী নন, দায়ী পরিবেশ, দেশ, সমাজ ও সরকার সবাই।

শিক্ষা ক্যাডারের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারের, বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের বৈষম্য অনেক। ফলে অনেকেই ওই ক্যাডারের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।  বিষয়টি যেন আমরা ইচ্ছা করেই জিইয়ে রেখেছি। স্বাধীনতা লাভের এত বছর পর এ বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন ছিল। শিক্ষা ক্যাডারে পরিবর্তনের জন্য অনেক শিক্ষক ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চালু করার কথা বলেন, প্রতি বছর দুবার বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির সভা করা, পদোন্নতিযোগ্য সবাইকে পদোন্নতি দেয়া, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে অনার্স, মাস্টার্স কলেজে পদায়ন, কোনো কর্মকর্তাকে একই পদে বা প্রশাসনিক পদে তিন বছরের বেশি থাকতে না দেয়া এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বরং জনস্বার্থে বদলির ব্যবস্থা করার কথা প্রস্তাব করছেন।

শিক্ষা বিভাগকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে মনে করেন সরকারি অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বিষয়টি কি আসলেই  তাই? এক এক চাকরির এক এক নিয়ম, এক এক প্রকৃতি। কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল নেই। সবাইকে সবার সম্মান করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি সে রকমটি যেন  করা হচ্ছে না। মনে করা হয়, শিক্ষকরা ক্লাস নেয়ার পর ঘুমিয়ে থাকেন। শিক্ষকতা আসলে অনেক কঠিন কাজ। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন মানসিকতার অনেক শিক্ষার্থীকে একই ক্লাসে একই ধরনের পড়ানো মারাত্মক সাইকোলজিক্যাল প্রেসার। শিক্ষার্থীরা এখন পড়তে চায় না, ক্লাস করতে চায় না, লিখতে চায় না, জানতে চায় না। অনেক আগ্রহ নিয়ে একজন শিক্ষক ক্লাসে গেলেন; শিক্ষার্থীরা বলবে, ‘স্যার এত কিছু দরকার নেই, সাজেশনটা দিয়ে দেন। পরীক্ষায় কী আসবে বলে দেন।’ এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার, যা শিক্ষকদের একার পক্ষে সম্ভব নয়; যদিও বড় দায়িত্বটি তাদের ওপরই বর্তায়।

প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে যান। অথচ শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে জাতীয় বেতন স্কেলের চতুর্থ গ্রেডে যান। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে অষ্টম জাতীয় স্কেল কার্যকরের আগে চতুর্থ গ্রেড পাওয়া শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে যেতে পারতেন। সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় সে পথও এখন বন্ধ। শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। পদটি দ্বিতীয় গ্রেডের। পদটিকে প্রথম গ্রেডে উন্নীত করার  সিদ্ধান্ত  এখনো বাস্তবায়ন করা  হয়নি। এ ক্যাডারে দ্বিতীয় গ্রেডে আরো সাতটি পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন। শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম গ্রেডের পদ একটি, দ্বিতীয় গ্রেডের সাতটিসহ মোট সাড়ে ১২ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সরকার বর্তমানে বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

নতুন ২৮৩টি বেসরকারি কলেজ সরকারীকরণ ও এসব কলেজে কর্মরত প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষককে আত্তীকরণ না করা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি। তারা বেসরকারি কলেজ থেকে আসা নতুনদের ‘নন-ক্যাডার’ পদে দেখতে চান। এ বিষয়টি নিয়ে আমি একটি কলাম লিখেছিলাম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিলাম আত্তীকৃত কলেজের শিক্ষকদের পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে, পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে ক্যাডারভুক্ত করার। এ সুযোগ শিক্ষকদের একাধিকবার দেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছিলাম লেখাটিতে। সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্তই নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি ভালো দিক।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী থাকে, একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অথচ অধ্যক্ষের কোনো যানবাহন নেই। এ কেমন অবাক করা বিষয়? তাহলে ওই অধ্যক্ষকে  যখন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়, নায়েমের ডিজি করা হয়, মাউশির কোনো এক বিভাগের পরিচালক করা হয়, তাহলে ওইসব পদে তিনি আসতে আগ্রহ দেখাবেন না কেন? ইচ্ছা করেই যেন এসব করা হচ্ছে শিক্ষা ক্যাডারের সঙ্গে? বেতন স্কেলে অনেক পেছনে থাকা বিভিন্ন ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তারা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। যুগ্ম সচিব, উপসচিবরা গাড়ি কেনার ঋণ পান, অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষরা নয় কেন? শুধু সম্মান দেখানোর জন্য বলছি না, বড় বড় কলেজের অধ্যক্ষদের যানবাহন না থাকলে তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের অফিস, মিটিং, সভা-সমাবেশে যান। তাদের কি রিকশা ভাড়া করে যেতে হবে? এটি দেখতে কেমন লাগে? উল্লিখিত বিষয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অত্যন্ত যত্ন ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে জাতীয় শিক্ষার মান বাড়ানো ও  মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করার জন্য।


লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036938190460205