অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাস সরকারি তিতুমীর কলেজের যাত্রা ১৯৬৮ সালে। রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল তখন জিন্নাহ কলেজ। স্বাধীনতার পর এ কলেজের নামকরণ করা হয় তিতুমীর কলেজ। শুরুতে এখানে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়া হতো। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এ কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পরপরই ১৯৬৯-৭০ সালে এ কলেজে গঠিত হয় প্রথম ছাত্র সংসদ। ১৯৯৬-৯৭ সালে নির্বাচিত হয় সর্বশেষ কমিটি। এর পর গত দুই দশকের বেশি সময়ে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে এখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ১০ বার। গত ২০ জানুয়ারি কলেজে গিয়ে দেখা গেল তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে কলেজের ছাত্র সংসদ ভবন।
কর্তব্যরত অফিস সহকারী তালা খুলে এ প্রতিবেদককে ভেতরে ঢুকতে দেন। সেখানে অনার বোর্ডে সংরক্ষিত রয়েছে ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদকদের (এজিএস) নাম। এতে দেখা যায়, প্রথম সংসদের ভিপি ছিলেন শহীদ সিরাজউদ্দৌলা, জিএস মফিজুল ইসলাম। সর্বশেষ ১৯৯৬-৯৭ সালে গঠিত কমিটির ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন যথাক্রমে আক্কাছুর রহমান আঁখি ও আনোয়ারুল হক আনোয়ার।
এর মধ্যে বিভিন্ন সময় আরও আটবার নির্বাচন ও সংসদ কমিটি গঠিত হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছাত্র সংসদের অফিসটি এখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতারা ব্যবহার করেন। দুটি কক্ষের একটিতে বসেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অন্যটিতে বসেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
কলেজে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ না থাকার বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন বলেন, প্রচলিত ছাত্র সংগঠনগুলো দলীয় হলেও ছাত্র সংসদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই ছাত্র সংসদ নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকের মতো। দাবি আদায়ের মঞ্চ হলেও সেই ছাত্র সংসদ এখন অনুপস্থিত। তাই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের অভিজ্ঞতা যেমন অপূর্ণ থাকছে, তেমনি সমস্যা নিয়ে কথা বলার ফোরামও নেই।
এদিকে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো তিতুমীর কলেজেও ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নেই। একমাত্র সংগঠন হিসেবে সেখানে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের কমিটি থাকলেও কোনো তৎপরতা নেই। ছাত্র ইউনিয়নের কোনো কমিটিই নেই।
এ প্রসঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া বলেন, সব শিক্ষার্থীর কার্যকর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তিতুমীর কলেজে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। বৈধ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সব ছাত্র সংগঠন নিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করলে ছাত্রলীগ স্বাগত জানাবে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের সহাবস্থান প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, ছাত্রদলের নেতৃত্ব দানকারীদের ছাত্রত্ব নেই। ছাত্রত্ব আছে এমন কোনো নেতা নির্বাচনে অংশ নিলে বাধা দেবে না। গত ৩০ ডিসেম্বর যেভাবে সব দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনও হবে বলে আশা করেন তিনি।
তবে ছাত্রলীগ সভাপতির অভিযোগ খণ্ডন করে শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক সবুজ বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকও নিয়মিত ছাত্র নন। তাই ছাত্রদলের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তাদেরও পারার কথা নয়। নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ থাকলে শাখা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবে।
ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, কমিটি না থাকলেও তিতুমীর কলেজে ইউনিয়নের কর্মী-সমর্থক রয়েছে। তা ছাড়া শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে।
তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফ হোসেন বলেন, নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার জন্য ছাত্র সংসদ কার্যকর জায়গা। তাই এ নির্বাচন অবশ্যই হওয়া উচিত। এখন পর্যন্ত সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে অবশ্যই দ্রুত নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত। তারা যেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কলেজগুলো সেভাবে পারে না।
সৌজন্য: সমকাল