সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবিতে সাদা পতাকা প্রদর্শন ও মানববন্ধন করেছে প্যানেল প্রত্যাশীরা। শুক্রবার (২৪ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৯ হাজার ৭৮৮ জনকে প্যানেলে নিয়োগের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক সালেহা আক্তার, সেক্রেটারি জাকির রিয়াদ, মহুয়া আক্তার, আক্তারুজ্জামান, মো. মহসিন, লিখন সরকার, মুন্নী আক্তার প্রমুখ। প্যানেল প্রত্যাশীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর এস নজরুল ইসলাম তামিজী।
এর আগে, গত ১২ জুলাই একই দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে প্যানেল প্রত্যাশীরা। একই তারিখে প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও স্মারকলিপি দিয়েছে ২০১৪ স্থগিত নিয়োগের প্যানেল প্রত্যাশীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতভুক্ত ‘সহকারী শিক্ষক’ শূণ্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবার দীর্ঘ চার বছর পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে নিয়োগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে ১৩ লাখ প্রার্থী আবেদন পত্র জমা দেয়। এত বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ২৯ হাজার ৫৫৫ জন (মহিলা ২০ হাজার ৪৬৬ এবং পুরুষ ৯ হাজার ৮৯)উত্তীর্ণ হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর নিয়োগ প্রদানের জন্য ৯ হাজার ৭৬৭ জনকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে ফল করা প্রকাশ হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী (২০১৪ স্থগিত) ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা থেকে ১০ হাজার পদে নিয়োগ প্রদান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। যা উল্লেখিত চাহিদা থেকে ২৩৩ জন কম।
বক্তারা আরও বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস পর্যন্ত সারাদেশে সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য ছিল ১৮ হাজার। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল-জুন মাসে যখন নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়, তখন সারাদেশে ১৮ হাজারের বেশি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও তা পূরণ করা হয় নি। অথচ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত নিয়োগ পরীক্ষা (২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত) শূন্য পদের বিপরীতে ১৮ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ থেকে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল, অথচ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ফলাফল প্রকাশিত হলে সেখানে ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ থেকে স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও যদি ১২ হাজারের স্থলে ১৮ হাজার ১৪৭ নিয়োগ প্রদান করা যায়, তাহলে (২০১৪ স্থগিত) ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞপ্তিটি চার বছর স্থগিত থাকার পরও উক্ত বিজ্ঞপ্তি থেকে কেন শূন্য পদ পূরণ করা হলো না সেটি অবশ্যই ভাবনার বিষয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রেজিস্টার সকল বিদ্যালয় সরকারিকরণ হলে, রেজিস্টার বেসরকারি প্রাথমিকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারী প্যানেল শিক্ষকরা নিয়োগ লাভ করার জন্য উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়। উচ্চ আদালত ৪৯০টি রিটের বিপরীতে প্রায় ১৫ হাজার জনের পক্ষে রায় প্রদান করে তাদের নিয়োগ প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করে। কিন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আদালতের রায় উপেক্ষা করে (৪২ হাজার ৬১১ জন) প্যালেনের সকলকে মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান করে। উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৪ বছর সময় অতিবাহিত হয়। একই সাথে আটকে যায় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখ লাখ চাকরি প্রার্থী।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অদূরদর্শিতার বলী হয় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের আবেদনকারীরা। শিক্ষা ক্ষেত্রে ৩/৪ বছরের সেশন জট এবং প্রাথমিকে নিয়োগের দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য ১টির বেশি আবেদনের সুযোগ পায়নি ৯০ শতাংশ চাকরি প্রার্থীরা। নিয়োগের সময়ক্ষেপণ এবং শূণ্য পদসমূহ পূরণ না করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায় ২০১৪ স্থগিত প্রার্থীদের উপর কেন বর্তাবে? সংশ্লিষ্টদের কারণে বয়স চলে যাওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সকলের প্রতি বিনীত নিবেদন মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০১৪ স্থগিত নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৯ হাজার ৭৮৮ জনকে প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হোক। উক্ত পরীক্ষাটি শতভাগ সুষ্ঠুতার সাথে অনুষ্ঠিত হয় এবং উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সকলেই মেধাবী। উত্তীর্ণের হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী চলমান করোনা মহামারি, আর্থিক মন্দা এবং অনেক শিক্ষক চাকরি হতে অবসর গ্রহণের ফলে শিক্ষাখাতে ব্যাপক শিক্ষক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা, আবেদনপত্র সংগ্রহ ও বাছাই করা, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ, তথা সামগ্রিক নিয়োগ কার্য সম্পাদন যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয় সাপেক্ষ। কিন্তু ২০১৪ স্থগিত ২০১৮ অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সকলকে প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দিলে মেধাবীরা যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে তেমনি কোমলমতি শিশু শিক্ষর্থীরা পাবে মেধাবী শিক্ষক এবং প্রাথমিকে চলমান শিক্ষক সংকটও কেটে যাবে। একই সাথে রাষ্ট্রের মূল্যবান সময় ও অর্থের অপচয় রোধ হবে। যা জাতীয় পর্যায়ে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না এবং ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারও বাস্তবায়ন হবে জানান বক্তারা।