সরকারি প্রাথমিকে গাইড বাণিজ্য

মাহবুব মমতাজী |

সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করলেও রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে গাইড বই বাণিজ্য। একই সঙ্গে পাঠদানও দেওয়া হয় টাকার বিনিময়ে। বেশির ভাগ স্কুলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে বিক্রি করা হয় নিম্নমানের এসব গাইড ও ব্যাকরণ বই। নির্ধারিত লাইব্রেরি কিংবা প্রকাশনীর বাইরে অন্য কোনো বই কিনতে নিষেধ করেন স্কুলগুলোর খোদ প্রধান শিক্ষক। বিদায় অনুষ্ঠান, মাসিক পরীক্ষার ফি ও বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা।

রাজধানীর অদূরে ডেমরা বামৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন মিলেছে এসব তথ্য। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ সেখানকার অভিভাবকরা।

জানা গেছে, এখানকার শিক্ষার্থীদের যেসব গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হয় তা পুস্তকের আড়ত খ্যাত রাজধানীর বাংলাবাজারেও পাওয়া যায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষই বিক্রি করে গাইড ও বিভিন্ন মানহীন বই। স্কুলে পাঠ্যসূচির অতিরিক্ত বই কিনতে বাধ্য করা হয় অভিভাবকদের। শিক্ষার্থীদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। বামৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি নির্ধারণেও নেই কোনো রাখঢাক। খাতা-কলমে অথবা নিয়মে না থাকলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ার পরও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৬০০-৭০০ টাকা করে।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে কোচিং করা বাধ্যতামূলক। কোচিং ফি হিসেবে প্রতি মাসে আদায় করা হয় ৫০০ টাকা করে। প্রধান শিক্ষকের পছন্দমতো গাইড বই চাপিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। দু-তিন মাস অন্তর এসব গাইড বই পরিবর্তনেরও নির্দেশনা দেন প্রধান শিক্ষক। একেকটি গাইড বইয়ের মূল্য ধরা হয় ৩০০-৩৫০ টাকা করে। প্রতি মাসে সিটি (ক্লাস টেস্ট) পরীক্ষার নামে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফি নেওয়া ৬০-৯০ টাকা করে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান বাবদ নেওয়া হয় ১৫০ টাকা করে। অনুষ্ঠান হোক বা না হোক এ ফি বাধ্যতামূলক।

বিদায় অনুষ্ঠানের নামে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আদায় করা হয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অভিভাবক আকলিমা অভিযোগ করে জানান, এ স্কুলটি সরকারি। পাঠদান বিনামূল্যে হওয়ার কথা। অথচ ছেলেমেয়েদের ভর্তির সময় থেকে প্রাইভেট স্কুলের মতো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা গুনতে হয়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে কিছু বললেই ‘ভালো না লাগলে বাচ্চাদের অন্যখানে নিয়ে যান’ বলে উল্টো জানিয়ে দেন। আবার গরিব শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষার ফি কিংবা ভর্তি ফিও কম রাখেন না। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে সরকারিভাবে চারজন শিক্ষক আছেন। কিন্তু গভর্নিং বডি দিয়ে রাখছে ১২ জন শিক্ষক। তাদের ব্যয়ভারের কথা চিন্তা করে যেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বাবলম্বী তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু গরিব শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’

স্কুল গভর্নিং বডির সভাপতি নুরুদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কী কী বাবদ ফি নেওয়া হয় তা আমি জানি না। সেসব হেড মাস্টারই ভালো বলতে পারবেন।’ আরও অভিযোগ পাওয়া যায়, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও চিটাগাং রোডের কয়েকটি স্কুলে সরকারি বইয়ের শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় কয়েক শ টাকা। স্কুলের অতিরিক্ত ফি, স্কুলের নামে খাতা, ড্রইং বুকসহ অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী তো আছেই। আর এসব বইও স্কুলের নির্দিষ্ট পাঠ্য তালিকায় উল্লেখ করা দোকান থেকেই কিনতে বাধ্য করা হয়। সোহেল হোসেন নামে আরও এক অভিভাবক জানান, স্কুল থেকে সরকারি বইয়ের বাইরে আরও দুটি ব্যাকরণ ও গাইড বই কিনতে হয়েছে; যার দাম প্রায় ১ হাজার টাকা।

 

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024809837341309