সরকারি স্কুলে ভর্তিযুদ্ধের মুখে শিশুরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কোনোরকম বিড়ম্বনা ছাড়াই শেষ হলো রাজধানীর বিয়াল্লিশটিসহ সারাদেশের ৩৫৮ সরকারি স্কুলে (সংযুক্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) নতুন শিক্ষাবর্ষে অনলাইনে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। তবে দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত নামীদামী প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি শ্রেণিতে ভর্তির জন্যই ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে শিশুদের। স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৬৩। অথচ আসন আছে মাত্র ৭১ হাজার ২৬৩। কেবল প্রথম শ্রেণিতেই দুই হাজার ৩২৮ আসনের জন্য আবেদন করেছে ৩৬ হাজার ২৪২ শিশু। রাজধানীর প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতা হবে আরও কয়েকগুণ। যেখানে ১১ হাজার ৯২০ আসনের জন্য আবেদন করেছে ৭৭ হাজার ৪৩৫ শিশু। রোববার আবেদনের শেষ পর্যায়ে এসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও টেলিটক সূত্রে সরকারি নামীদামী স্কুলে ভর্তির জন্য শিশুদের এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্রই উঠে এসেছে। তবে অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলছেন, টেলিটকের মাধ্যমে সবাইকে ভর্তির আবেদন করতে হয়েছে। তবে ভর্তির আবেদন নিয়ে কোনরকমের ঝামেলা পোহাতে হয়নি কাউকেই। অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল আবেদন প্রক্রিয়া। টেলিটকের নির্ধারিত ওয়েবসাইটের (ww.wgsa.teletalk.com.bd) মাধ্যমে আবেদন করতে হয়েছে সবাইকে। এবারও দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে সরাসরি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে লটারির মাধ্যমে। তবে এবার প্রথমবারের মতো ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সৃজনশীল বা রচনামূলক প্রশ্নের পরিবর্তে অল্প কথায় বা এক কথায় উত্তর দেয়ার মতো প্রশ্ন থাকছে। অধিদপ্তর বলছে, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রশ্নপদ্ধতিতে এই পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে উত্তর সঠিক হলে শতভাগ নম্বর দেয়া সম্ভব হয়, পরীক্ষকভেদে কমবেশি দেয়ার সুযোগ নেই। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, রোববার সারাদেশের আবেদনকারী শিশুদের তথ্যে দেখা গেছে, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত ৩৫৮ নামীদামী স্কুল প্রতিটি শ্রেণিতেই ভর্তির জন্যই ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে শিশুদের।

ভালো মানের স্কুল স্বল্পতায় প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোকেই ভর্তির সর্বোচ্চ চাপ সামলাতে হয় সব সময়। আর এ চাপ স্বাভাবিকভাবেই বেশি পড়ে রাজধানীর প্রতিষ্ঠানগুলোয়। যেখানে নামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ দিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকর্ষণের জায়গা হচ্ছে সরকারি সংযুক্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। গত কয়েক বছরে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কিছুটা বাড়লেও তা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে বলছেন শিক্ষাবিদরা। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ একরামুল কবীর বলছিলেন, আসলে রাজধানীর মতো সারাদেশেই নামী বেসরকারি স্কুলের বাইরে সবার আকর্ষণ ওই সরকারি সংযুক্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোই। এখানে তুলনামূলক ভালো মানের শিক্ষা দেয়া হয়। মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। আছে ভালো অবকাঠামোও। সব দিক চিন্তা করলে এসব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা লেখাপড়ার জন্য আগ্রহী থাকে। তবে আমরা এখনও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান খুব বেশি গড়ে তুলতে পারিনি। যদিও গত কয়েক বছরের রাজধানীসহ দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অনেক বেড়েছে। আসলে ভালো মানের শিক্ষার জন্য ভালো মানের স্কুলও বাড়াতে হবে।

এবারের ভর্তি নীতিমালা অনুসারে মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ঢাকা মহানগরীর স্কুল পার্শ্ববর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা সংরক্ষণ করা হবে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর সরকারি স্কুলগুলোতে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর এ গ্রুপের স্কুলগুলোর মাধ্যমে শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীর সরকারি স্কুলগুলোয় প্রথম শ্রেণির ভর্তির লটারিতে হবে।

১৮ ডিসেম্বর এ গ্রুপের ১৪ স্কুলের, ১৯ ডিসেম্বর বি গ্রুপের ১৪ স্কুলে এবং ২০ ডিসেম্বর সি গ্রুপের ১৩ স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা হবে। ২৪ ডিসেম্বর তিন গ্রুপের স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণির ভর্তি লটারি হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৫০ নম্বরে এক ঘণ্টার আর চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে একশ’ নম্বরের দুই ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষা হবে। মোট ১৭ হাইস্কুলে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বাকি স্কুলগুলোর কোনটি দ্বিতীয় আবার কোনোটি তৃতীয় বা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যেসব স্কুলে নেয়া হবে

আজিমপুর গবর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি গবর্নমেন্ট বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গবর্নমেন্ট বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়ের ফিডার শাখা, তেজগাঁও বালক উচ্চবিদ্যালয়, তেজগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল বালক উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুল, খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুলের ফিডার শাখা, নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত উচ্চবিদ্যালয়।

আরও আছে মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। সব স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে আসন দেড় হাজারের কিছু বেশি। প্রথম শ্রেণির ভর্তিতে শিক্ষার্থীর বয়স জানুয়ারিতে ছয় বছরের বেশি হতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062000751495361