সরকারিকরণ তালিকায় অস্তিত্বহীন বিদ্যালয়

আজমল খান |

সিলেট জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণে ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটেছে। সরকারিকরণের তালিকায় এমন বিদ্যালয়ের নাম উঠেছে যেখানে কোনো ছাত্র নেই, শিক্ষক নেই। এমনকি বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্বই নেই। জৈন্তাপুর উপজেলার ‘এম আহমদ প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর নাম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারিকরণ তালিকায় এসেছে। অথচ সরেজমিন এলাকা ঘুরে এই নামে কোনো বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে স্থানীয় শিক্ষা অফিসও কিছুই জানে না। এই তালিকা থেকে কাল্পনিক বিদ্যালয়টির নাম বাদ দেয়ারও কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। আবার যোগ্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যথাসময়ে তাদের প্রতিবেদন দেয়ারও কোনো তাড়া নেই।

ভুয়া বিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করে জৈন্তাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জলিল বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলায় ‘এম আহমদ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে কোনো বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। সরকারিকরণ তালিকায় কাল্পনিক নামটি কারা তালিকাভুক্ত করেছেন তা তার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকেও এই বিদ্যালয়ের প্রস্তাবও পাঠানো হয়নি। জাতীয়করণের তালিকায় অস্তিত্বহীন বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে শুনে চমকে ওঠেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাগজ না দেখে কিছুই বলতে পারছি না। তবে এ রকম কোনো বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে না। দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয় সরকারিকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর ধাপে ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ ও প্রতিবেদনের আলোকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু কিছুসংখ্যক বিদ্যালয়ের প্রতিবেদন না পাওয়ায় সেগুলো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে। বারবার তাগিদ দেয়ার পরও শিক্ষা অফিস থেকে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবেদনের অভাবে সিলেটের ৪৫টি বিদ্যালয়ের সরকারিকরণ ঝুলে গেছে। যথাসময়ে প্রতিবেদন না পাওয়ায় বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণ করা হচ্ছে না। সরকারের শেষ সময়ে এসেও সরকারিকরণ না হওয়ায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গোপাল চন্দ্র দাস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন পাঠাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙেনি। যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ৪৫টি বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নামমাত্র বেতনে চাকরি করছেন। বছরের পর বছর বেতন-ভাতা না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুর্গম এলাকার এই বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক শিক্ষক জানান, নানা কারণ দেখিয়ে জাতীয়করণের প্রতিবেদনের নামে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও তাদের মন গলাতে পারেননি অনেক শিক্ষক। টাকা না দেয়ায় বিদ্যালয়গুলোর প্রতিবেদন যথাসময়ে পাঠানো হয়নি।

শহরতলির দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বড়চক প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ২০১০ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। অবকাঠামোসহ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের উপযোগী। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই শেষে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য অনেক আগেই মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনসুর আহমদ জানান, এখানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। পড়াশোনার মান খুবই ভালো। কিন্তু ২৬ মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। আমরা বড় কষ্টে আছি। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মধ্যে নানা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

 

সূত্র: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057148933410645