সরকারিকরণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের কাগজ যাচাই আর ফুরায় না

শরীফুল আলম সুমন |

সরকারিকরণের লক্ষ্যে প্রায় তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পায় তিন শতাধিক কলেজ। এরপর প্রায় দেড় বছর আগে সরকারিকরণের গেজেট জারি করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু একই কাগজ বারবার যাচাই-বাছাইয়ে সময় পার করা হচ্ছে, এমনকি এখন পর্যন্ত কোনো ফাইলই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। ফলে কাজের ধীরগতিতে সরকারিকরণের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। দৈনিক কালেরকন্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

বিস্তারিত: জানা যায়, কলেজগুলো সরকারিকরণে সম্মতির পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর ও তাদের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর পরিদর্শন টিম সরেজমিনে কলেজে গিয়ে প্রত্যেক শিক্ষকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে। সরকারিকরণের গেজেট হওয়ার পর আবার প্রত্যেক শিক্ষককে সব কাগজপত্র মাউশি অধিদপ্তরে জমা দিতে হয়। এরপর কয়েকটি কলেজকে মডেল হিসেবে ধরে পদ সৃজনের জন্যও কিছু কলেজের কাগজপত্র নেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে আবারও প্রত্যেক শিক্ষকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করে মাউশি অধিদপ্তর। ফাইলগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর তারা আবার যাচাই-বাছাই শুরু করেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর ফাইল যাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি)। তারাও যদি প্রত্যেক শিক্ষকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে চায় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।    

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক কাগজ কতবার যাচাই-বাছাই হবে? যদি সমন্বয় করে একবারই যাচাই করা হতো তাহলে অনেক সময় বেঁচে যেত। শিক্ষকদেরও দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

এসব ব্যাপারে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাউশি অধিদপ্তরের কাজ বলতে গেলে শেষের পথে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে ফাইলগুলো যাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। একসঙ্গে অনেক কলেজের হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর কাগজপত্র দেখতে হচ্ছে। তবে আমরা খুবই দ্রুততার সঙ্গে কাজগুলো করার চেষ্টা করছি।’

সূত্র জানায়, একাধিকবার যাচাই-বাছাই নিয়েও অভিযোগ বাড়ছে। বিশেষ করে মাউশি অধিদপ্তর শিক্ষকদের নিয়োগপত্র পাঠানোর স্মারক বই, চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া মূল পত্রিকা, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি পাঠানোর চিঠিসহ নানা দুর্লভ কাগজপত্র চাচ্ছে। কিন্তু অনেক কলেজের সংরক্ষণেই এগুলো নেই। ফলে শিক্ষকরা যাচাই-বাছাইয়ে এসে সমস্যায় পড়ছেন। আর এসব সমস্যা মেটাতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও বাড়ছে।

ইতিমধ্যে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা, নওগাঁর রানীনগর উপজেলাসহ একাধিক কলেজের শিক্ষক কাগজপত্র না দিতে পারায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালকের (কলেজ ও প্রশাসন) নেতৃত্বে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন কলেজ উইংয়ের কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, সরকারিকরণের গেজেট হওয়া ৩০২ কলেজের মধ্যে ২২০টির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ৭০টি কলেজের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইল রাখার জায়গা না থাকায় তা পাঠানো যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় এখন শিক্ষকদের ডেকে যাচাই-বাছাই করছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২০টি কলেজের শিক্ষকদের কাগজ যাচাই শেষ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই শেষ হতেই আরো কয়েক বছর সময় লাগবে। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মাত্র একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। সেখানেও দীর্ঘদিন সময় লেগে যাবে।

সূত্র জানায়, সরকারিকরণকৃত কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫৬ এবং কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। সরকারিকরণের সম্মতির পরই কলেজগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর পর থেকে অনেকেই অবসরে যাওয়ায় শিক্ষক সংকটও প্রকট হচ্ছে।

সরকারিকরণকৃত শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) গত ১৫ ডিসেম্বর দ্রুত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারীকরণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকারিকরণকৃত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজনের জন্য মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু মাউশির কর্মকর্তাদের নানা কূটকৌশল, বাহানা ও দীর্ঘসূত্রতার জন্য আত্তীকরণ প্রক্রিয়ার কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিকরণের সম্মতির পর গত তিন বছরে প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে চলে গেছেন।

সকশিস সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এক কাগজ কেন বারবার যাচাই করতে হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে চার-পাঁচ বছরেও আত্তীকরণ শেষ হবে না। তবে এর মধ্যে আমাদের অর্ধেক শিক্ষক-কর্মচারীই অবসরে চলে যাবেন। তাই দ্রুত আত্তীকরণের দাবিতে আগামী বছরের শুরু থেকেই আমরা মানববন্ধন, কলেজে কলেজে লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033509731292725