নতুন করে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হবে না জেনেও ফের অবস্থান কর্মসূচিতে যাচ্ছেন দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সরকারিকরণের দাবিতে আগামিকাল বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন তারা। বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে একথা জানিয়েছেন।
মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, বৃহস্পতিবার জাতীয় প্র্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকরা। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষকরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন। অনেক শিক্ষক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সরকার দুই একদিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা না দিলে আমরা অবস্থান কর্মসূচি থেকে অনশনে যেতে বাধ্য হবো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ জানুয়ারি সারাদেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। তবে সে সময়ে বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা যথাযথভাবে পরিসংখ্যান করা হয়নি। ফলে সারাদেশের ৪ হাজার ১৫৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
খোকন বলেন, সরকারিকরণের দাবিতে তৃতীয় ধাপেও বাদ পড়া এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিও শুরু করেছিলেন শিক্ষকরা। তিনজন সচিবের আশ্বাসে ৭ ফেব্রুয়ারি অনশনের ১৮ দিন পর কর্মসূচি স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান শিক্ষকরা।
সরকারিকরণের দাবিতে তৃতীয় ধাপে বাদপড়া শিক্ষকরা গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তারা। পরে তিনজন সচিবের আশ্বাসে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে ৭ ফেব্রুয়ারি অনশনের ১৮ দিন পর কর্মসূচি স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার বাদপড়া ৪ হাজার ১৫৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ফের অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। এতে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা অনশন কর্মসূচি পালন করবেন।
এদিকে গত ৮ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ইঙ্গিত দেন, প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন করে আর কোনো বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হবে না। মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তাই নতুন করে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করার পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াধীন ৩২টি প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারিকরণ হবে। এগুলো প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২৬ হাজারের মধ্যে রয়েছে।
সরকারিকরণের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সমিতির অনশন এবং তাদের হিসাব মতে বাদপড়া চার হাজার ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ‘আর কোনও বিদ্যালয় সরকারিকরণ হবে না।’
বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্যে মর্মাহত হয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা দেখা করেছি। মন্ত্রী বলেছেন, সেসময় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের দেয়া পরিসংখ্যান যথাযথ না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ পড়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিলে বাদপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণের ব্যবস্থা নিতে পারি। শিক্ষক নেতা মামুনুর রশিদ বলেন, এখন আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায়ে আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই ।
